ক.
পাঁচের মতোন নিতান্ত সহজ-সরল আকারের শান্তিপুর গ্রাম। হালে কত সব রটনা রটছে, ঘটনা ঘটছে। গুণতে গেলে ক্যালকুলেটর নিয়ে বসতে হবে, ডিজিটে ডিজিটে ক্যালকুলেটরের স্ক্রিন ভরে যাবে, হিসাবকারীর আঙ্গুল ভরবে ব্যথায়; রান্না-বান্না রেখে তাবৎ সন্ধ্যা জব্বার মুন্সীর বড়ো ছেলের মেজো নাতীর বউ, কর্তব্যপরায়ণ সাংবাদিকের মতোন ‘পয়েন্ট টু পয়েন্ট’ সংবাদ সংগ্রহ করবে; তবুও সহি ‘হিসাব’ মিলবে না এসব রটনা-ঘটনার।
কেউ হয়তো ঘুষের টাকায় প্রকাণ্ড বাগানবাড়ি করেছে, পুকুর বানিয়েছে বড়ো বড়ো। গরমকালে দুটোই তামাম গ্রামের মানুষের উপকার করার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে, একটার আছে মনে প্রশান্তি দেবার উপযোগ আর অন্যটির শরীর জুড়ানোর যোগ্যতা, মোক্ষম যোগ্যতা; তবে সে যোগ্যতারা এলাকার মানুষের চিন্তার কলসেই বন্দী। চিন্তারা তলানিতে পড়তে পড়তে বুদ ছড়ায়, এক সময় শীতল জলে পরিণত হয়; রূপ নেয় বরফে। কারণ, গরীবদের জন্য তো ওরা এসব করেনি, করেছে নিজের জন্য।
অবশ্য এক খেয়ালে মঙ্গলই হয়েছে, এলাকার বাসিন্দাদের জন্য। এরা তো আর ওইসব ছদ্মবেশী, ভালো মানুষের পোশাকধারীদের মতোন জটিল নয়, টাকা হারানোর ভয়, বউকে যথাসময় ‘সীতাহার’ কিনে দিতে না পারার কষ্ট নেই এদের। গ্রামের মানুষগুলি সরল, এই অর্থে আবার জটিল। কারণ, বিশ্বজগতের সবচে’ বিপদজনক মানুষ হচ্ছে সরল মানুষরা, এরা হুট করে কি করে বসে, কার সামনে কী বলে বংশপরম্পরায় গড়ে তোলা সম্মান মাটিতে না মিশিয়ে দেয়! এমনি হাজার রকম ‘শোষিত-বঞ্চিত’ সরল মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে, জ্যামিতিক হারে, শান্তিপুরে।
সদু মোল্লার পিছনে যেনো লেগে পড়েছে পুরো গ্রাম। জমির মাস্টারের মেডিকেল পড়ুয়া বখাটে ছেলে রবি, পড়ে মেডিকেলে আর হয়েছে কবি। ব্যাটা আঁতেল কবি! আজকাল নাকি কবিতা লেখে সদুকে নিয়ে। কী বিশ্রী সেসব কবিতা, একেবারে বিশ্রী! ওসব জঘন্য লেখা মুখে নেয়া দূরে থাক, চোখ পড়লে ঘিনঘিন করে গা! এমনটাই মনে হয় সদুর কাছে। মনে হয় মানে! এটা হলফ করে বলে দিবে যে কেউ।
সদু সেদিন বাগানবাড়ির বাংলোর দাওয়ায় বসেছিল। টেবিলে রাখা স্থানীয় দৈনিকে যখন ‘সদু মোল্লার দিনকাল’ নামে কবিতাটায় চোখ পড়ল, তখন মেজাজটা গেল চটে! হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকা ষোল বছরের শ্যামা মেয়ে সুইটি দৌঁড়ে পালালো, ত্রাসে। প্রেসার ‘হাই’ হয়েছে সদুর!
‘মাস্টারের পাঠা! তোর খবর করিম রে, মোরখোগুলার মতন মোর পেছনোত নাগছিস!’
সদুর মুখে আগুনের শিখা, জ্বলছে দাউ দাউ! সকালে চুলোয় রান্না বসানোর আগুন না থাকলে, খড়ি নিয়ে এসে আগুন নিয়ে যেতে পারে যে কেউ; তবে বুকের পাঠা থাকতে হবে।
এতক্ষণে সমিলা বিবি আর সুইটি বিবি হাজির হয়েছে জল নিয়ে। দমকল বাহিনীর চৌকস কর্মকতার মতোন মিনিট চারেক মূলবান সময় খরচা করে আগুন নেভালো। মাথা মুছলো সুইটি আর পিঠ মুছে দিল সমিলা।
আহা রে! করিমন আর ছমিনারে ছাড়া যে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠছিল! ওদের তালাক দেয়ার পর দুইটা মাস যে কিভাবে কেটেছে! সেটা সদুর তৃষ্ণার্ত শরীর জানে। সালিদের তালাক না দিয়ে উপায় আছে! আঠারো দিনই দুনিয়ার কেত্তন!
‘তোমরা ভালো হয়া যাও। নইলে কইনো, দুই জনে বাপের বাড়িত যামো, আর আইসপার নাই!’
বউদের এমন ঘ্যানঘ্যানানি ভাল্লাগে না! তিন তালাক দিয়ে রানার বিলের ওপারে তাড়িয়ে দিয়েছে। বারো বছরের দুই-দুইটা মেয়েকে নিয়ে সে কি মরাকান্না! তবুও মন গলেনি সদুর, চলে যেতে হয়েছে। মামলা-মোকদ্দমাকে চুটকি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে, এলাকার গণ্যমান্যরা তার বেলাতে ‘সাক্ষী গোপাল’। তারাও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছে, না নিয়ে কি আর উপায় আছে! অধিকাংশকেই তো তার জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতে হয়, পেট চালাতে হয়। তার বিপরীতে গিয়ে, না খেয়ে মরতে নারাজ ওরা।
সুইটি আর সমিলা, সদুর বাধ্য নারী, কাজের মেয়ে নয়। চাহিদার রাতের উপযোগ। সেসব রাতে কিশোরী দুটিকে হয়ে উঠতে হয় নারী, পরিপূর্ণ নারী হবার দৃঢ় চেষ্টা করতে হয়। নইলে গণ্ডদেশ কিংবা পিঠ, কখনো কখনো বক্ষদেশেও জানোয়ারের মতোন নখ বসায়! এসব কথা, এসব ব্যথা বিশ্ব-বিধাত্রীর কেউ জানে না, বোঝে না। জানে, বোঝে শুধু রাতের শুকতারা, অমাবস্যার চাঁদ অথবা রাতের নৈঃশব্দ্য ভাঙানো হুতুম পেঁচা আর শেয়ালরা।
স্রষ্টা কী একটা তীক্ষ্ণ ক্ষমতা দিয়ে যেনো এসব প্রাণীকে গড়েছেন, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ যেখানে এসব ব্যাপার বেমালুম এড়িয়ে যেতে পারে, অন্যান্য প্রাণীগুলি ঠিক ধরে ফেলতে জানে; নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে এসব অতর্কিত হামলা কবলিত মানুষদের বাঁচাতে। সব সময় যে সার্থক হয় তাও কিন্তু নয়, ব্যর্থ হয় বলেই তো সদু মোল্লা দিব্যি শরীর নিয়ে কারবার করে। বাংলোর চারটা ঘরে রাতের বেলা কি চলে, আধা-পাকা রাস্তা বেয়ে, শহর থেকে মাতাল হয়ে, সাদা-কালো গাড়ি চেপে বখাটেরা কিসের লোভে আসে? কেউ কি জানে না? জানে, কিন্তু..লাভ কী? সব জানা কি সব সময় কাজে দেয়!
এলাকায় গাঁজা-মদে মাতামাতি থাকবে, কিসের পাঠাগার! কিসের সেচ্ছাসেবী সংগঠন! অনর্থক সময় আর টাকা নষ্ট! চলবে না এসব এলাকায়। সদুর চাওয়া এমনটাই। সে চাওয়ার বিপরীতে ঘি ঢালতে এসে দুইবার গোটা গাঁয়ের মানুষের সামনে ‘নাক ছেচড়া’ খেতে হয়েছে রবিকে। তবুও দমে নাই, আবার বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।
দুপুর গড়িয়ে এসেছে। গরুগুলির পেটে খিদা বোধ হয় বাড়ছে, চিল্লাচ্ছে। পালা করে গোসল করছে সমিলা আর সুইটি। মন মাতানো কচি শরীর! দেখলে ছুঁইতে ইচ্ছে করে সদুর। নাহ! মাথায় আগুন উঠলে ওসব ভালো লাগে না, সহজে ঠান্ডা হয় না সদু, পুরো দিন হাই-ভোল্টেজে থাকে।
‘ছি, ছি, এগিলাও ওই ব্যাটা কবি কাগোজত দেয়, মেডিকেলের মাস্টোররা তাইলে এগিলায় শিকায়! আসতাগফিরুল্লাহ! ‘
হনহন করে বেরিয়ে গেল সদু। সমিলা আর সুইটি চেয়ে দেখল একবার, ওইদিকে।
নাহ! এবার পত্রিকার অফিসে তালা ঝুলানোর ব্যবস্থা করতেই হবে। যেই চিন্তা, সেই কাজ। পত্রিকার অফিস বন্ধ হয়ে গেল তিনদিনে মধ্যে। ক্ষমতার উপরে কি আছে! যেভাবে ইচ্ছে খাটানো যায়।
মনটা ভার করে সন্ধ্যা গায়ে মেখে বাড়ি ফেরে রবি। বাবা বাড়ি নেই, কলকাতায় ফুপুর বাড়ি বেড়াতে গেছে, মা আর বোনটাকেও নিয়ে গেছে। ভীষণ একা লাগছে, একটু ভয়ে ভয়ে কাটছে ক্ষণ! এত বড়ো হয়েছে, তবুও রাতে একলা থাকতে পারে না। রাসেদা খালার বারো বছরের ছেলেটা এসেছে, থাকবে, রবির সাথে। রাতের খাবার পাঠিয়েছে খালা, পুঁটি মাছের সাথে কচু আর আলু মিশিয়ে সব্জি। সন্ধ্যেতেই খেয়ে নিল রবি।
শু’তে যাবার আগে গোয়ালে একটু ঢু’ মেরে এলো, জাবর কাটছে গরু দুটো, খাচ্ছে। রহিমা বু ঠিকমতো খাইয়েছে ওগুলোকে, বোঝা যাচ্ছে। চাঁদটাকে কেমন মায়াবী দেখায় আজ! রবির মনে চায়, চাঁদের দেশটা ঘুরে আসে সে। ইচ্ছা আছে, মেলা টাকা কামাইতে পারলে ঠিক যাবে চাঁদের দেশে।
ঘুম আসছে না। সাবিনাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, অথচ সকালেই দেখেছে। প্রেমে পড়লে এটা এক কমন ব্যামো, বারবার দেখতে মন চায়, ছুঁইতে ইচ্ছা করে; রবি ছোঁয়নি কোনোদিন। রবির মতে, যা করার বিয়ের পর, অতো তড়িঘড়ি করার কী আছে! সবুরে নাকি মঙ্গল হয়, তবে তাই হোক।
রেশমী চুড়ি, নীল শাড়ি, কালো ব্লাউজ, কপালের কালো টিপ, নরম ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক– সব মিলিয়ে কী যে সুন্দর লাগে সাবিনাকে! মনে কয়, দিন-দুনিয়া ভুলে যায় রবি। একথা সাবিনাকে বললে লাজে মরে, বলে, মিথ্যুক! সব সময় চাপাবাজি।
হাসে রবি। আহা! কী উড়াল উড়াল সময়!
এটা সেটা ভেবেই যাচ্ছে রবি। ঘুম আসেনি চোখে। রাসেদা খালার ছেলেটা ঘুমোচ্ছে। সজনে পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের তরুণী আলো আসছে ঘরে, ছেলেটার গালে যেনো চুমো দিচ্ছে বারবার!
ঘড়িতে মিনিটের কাঁটা ছয়ে আর ঘন্টার কাঁটা বারোতে। মানে রাত সাড়ে বারোটা। পেঁচা ডাকছে যে! ভয় লাগছে রবির। পেঁচার ডাকে নাকি অমঙ্গলের আভাস থাকে, ছোটবেলায় শুনেছে। সেই থেকে আজ অবধি ভয়ের কারণ মনে হয়।
চোখের চারটে পাতা পরস্পর মিলে যাচ্ছে, তন্দ্রা চলে আসছে।
আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম…
ফজরের আজান দিচ্ছে মসজিদে। কাকের ডাকও শোনা যাচ্ছে, ভয় মিশ্রিত স্বর কাকের।
জেগে উঠল রবি। নিমগাছের ডালে বানানো দাঁতোয়ানটা হাতে নিয়ে হাঁটতে বের হল, বাজারের অভিমুখে; আধা-পাকা সড়ক ধরে।
ছি! ছি! মাস্টোরের ব্যাটা, তোমরা এটা কাম করলেন! পিরিত কন্নে সাবিনার সাতে আর পেট বানাইছেলেন রুবির! ছেক্কো, ছেক্কো!
কামটা যখন করচিস রে জানোয়ার, তা বিয়াও করি ঘরোত আনলু না ক্যান! গলাত দড়ি দিয়া মরিল ক্যান চেংড়িটা?
ছি! মাস্টোর এটা কি পয়দা কচ্ছিল রে!
রুপাই, সোনাই চাচার মুখে এমন অশ্রাব্য বাক্য শুনে থ’বনে গেল রবি। রুবি কাজটা করল কেন? ভেবে পাচ্ছে না। চারদিক থেকে মানুষ ছুটে আসছে বাজারের দিক, ছড়িয়ে গেছে রুবির মৃত্যুর খবর। কোথা থেকে ছুটে এলো সাবিনাও।
ছি! তুই আমারে ছুঁইবার চাইতি না এই জন্নে, লুচ্চা কোনথাকার! লুচ্চামি করছিস আর ছাওয়ার বাপ হবার পারবি না, বিয়ে করতে পারবি না। তাহলে অকামটা করছিল ক্যান রুবির সাথে? ক, লুচ্চা, ক!
গালির বয়ান দিচ্ছে সাবিনা। গোটা তল্লাটের মানুষের মতো
‘অবিশ্বাসের মশাল’ জ্বালিয়ে ধোঁয়াটে, বিদঘুটে করছে রবির টগবগে দিনটাকে। রবি চুপ, ভাষাহীন হয়ে বসে পড়েছে, বাজারের রাস্তায়। কোনো প্রমাণ নেই তার কাছে, সাবিনার কাছে ঠিকই প্রমাণ আছে। সেটা হচ্ছে– রুবি যে ঘরে ফাঁসি দিয়েছে, সে ঘরের টেবিলে পাওয়া চিরকুট। লেখা আছে সব।
আসল ঘটনা কি? সেটা শোনার তিলার্ধ আগ্রহ দেখায়নি সাবিনা। অবাক করে ব্যাপারটা রবিকে। ‘বিশ্বাসের ঘরে’ চোর ঢুকেতে পারলো! এজন্ম-পরজন্ম যে পাশে থাকবে, সে এক কানে শুনে, তৃতীয় চোখে দেখে, রবিকে অবিশ্বাস করল! নিজের দুই কান, চোখকে ‘স্ট্রেটকাট’ এড়িয়ে গেল! রবির কাছে সত্যিটা জানতে চাইলো না, চলে গেল।
লোকে লোকে ভরে গেছে বাজার। সকালের সূর্যটায় রাক্ষুসে তাপ!
পুলিশের গাড়ি এলো, হাতকড়া পড়লো রবির হাতে। রুবি হত্যা মামলায় রবি জেলে। পুলিশকে নিশ্চয় সদুই জানিয়েছে।
কোর্টে কিভাবে রুজিনা চাচি মিথ্যে সাক্ষী দিতে পারলো! তাও আবার নিজের মেয়ের হত্যাকারীকে নিয়ে? কী দিয়ে সুখ দেয়নি রইজ চাচা? ভালোবেসেই তো তার ঘরে এসেছিল রুজিনা, বারো বছর বয়সে। কত্ত আদর-যত্ন করতো! গৃহস্থালি কাজ করে খাওয়াত, নিজের জমিতে মৌসুমে মৌসুমে ধান, আলু চাষ করতো, সে দিয়েই দিব্যি সংসার চলতো। আর দশজনের মতোন চেয়ে-চিন্তে চলতে হতো না।
মনু মিয়ার ঘরে চালা দিতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে পা আর কোমরটা ভাঙল। সর্বনাশের বাঁশি বেজে উঠল, পাল্টে-উল্টে দিল সব। জীবনটা থমকে গেল যেনো! সে জীবনকে চালিয়ে নিতেই এ কাজ করলেন রুজিনা চাচি! বাতাসে ছড়ালেন এসব মিথ্যে? বাতাসটাই এমন, যা পায় তাই ছড়িয়ে বেড়ায়; সত্য-মিথ্যের বাছ-বিচার করে না, কখনো না!
খ.
আজ বিশ বছর পর, রবির মনে পড়ছে এসব। বিশটা বছর! কিভাবে কেটে গেল! কত চেষ্টা করতো একটু আয়োজন করে দুঃখবিলাস করবে, না! সে সময়ই যেনো হতো না। যখন তখন মন খারাপের ব্যামোটাও পেয়ে বসে না এখন। বয়স! বয়সের খেলা। নাহ, বয়স না, সময়ের খেলা। সময়ের হাতেই তো জিম্মি আমরা। আজকের দিনটা, ‘আগামীকাল’ হয়ে যাবে গতকাল; ‘গতকাল’ আবার আজকের এই দিনটাই ছিল ‘আগামীকাল’। খুব সহজ হিসাব, পানির মতোন সহজ। রবির জীবনটাও নিশ্চয়ই সে হিসাবের বাহিরে নয়, ভিতরে।
কারাজীবনটাও কেটেছে জীবনের মতোই, কষ্টে, ঈষৎ সুখে। চল্লিশটা ঈদ, চল্লিশটা চাঁদরাত কেটেছে জেলখানায়, জেলখানার খাওয়ায়, বাবা-মা-ছোটবোনটাকে ছাড়া। কিভাবে দিন কাটিয়েছেন মা! খুবই কেঁদেছেন হয়তো, বাবা নিশ্চয়ই জায়নামাজটা হাতে নিয়ে হেঁটে হেঁটেই ঈদগাহে গেছেন; পাশে ছিল না শুধু রবি। দশবছরের ছোটবোনটা… ও কী করেছে?
‘ভাইয়া, ঝালমুড়ি, আচার আনিস’ বলে আবদার করেছে, ভুল করে। আচার, মুড়ি না পেয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে; খুব কেঁদেছে। এখনো কি ও অভিমানী? এখনো কি ছোট্টটি আছে?
এই যা! মাথাটা গেছে নাকি! হ্যালুসিয়েশনে পেয়েছে বোধ হয়। বাবা তো দশবছর আগেই ওপারে জায়গা করে নিয়েছেন, জ্বরের ছলেই। বাবার একাকীত্ব ঘোচাতে বাবা বোধ হয় মাকে ডাকলেন, মা চলে গেলেন, বাবার কাছে; ঐ তারার দেশে, দূরের আকাশে। বাবার ডাক মা ফেলতে পারেননি কোনোদিন। বেঁচে থাকতে দেখেছে রবি, তারা একরাতের জন্যেও আলাদা থাকেনি। রবির বাবা চলে যাবার ‘একচল্লিশতম’ দিন, ঘোর সন্ধ্যেবেলা, চলে গেলেন মা; রেখে গেলেন সদ্য বিবাহিত আদুরি মেয়েটাকে।
আজকাল শান্তিপুরেই থাকে ওরা, রবিদের বাড়িতে। স্বামীটা ও’ ভালোই পেয়েছে, রবির বাবার স্কুলেই পড়ায়; হাজার পনেরো মাইনে। দুই চারটা টিউশনি করায়, রবির আদুরি বোনটাকে বেশ রেখেছে। দুজনের সংসারে ‘তিন’ হয়ে এসেছে একটা মেয়ে, রাবিয়া। ওর বয়সও নয় পূর্ণ হলো এবার। বেশ মেধাবি, ইচ্ছে ডাক্তার হবে, মামার অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দেবে। ভাবতে গেলেই রবির চোখে জল থাকে না, গড়িয়ে পড়ে, গাল বেয়ে; এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা।
এত খবর সে এমনি পায়নি। একেক জনের কাছে জেনেছে একেক খবর। বাবা, মা বেঁচে থাকতে মাসে মাসে আসতেন, আসতো বোনটাও। এখন সংসারশিল্পী হয়ে উঠতে গিয়ে বোনটা বছরে দুই একবার আসে, মেয়ে আর স্বামীসহ। ভালো লাগে, মনটা একটু শান্তির দেখা পায়, যে শান্তিটাকে জেলখানার দেয়ালে, মেঝেতে, আকাশে খুঁজে-ফিরে রবি। জেলখানার ছাদটাকেই আকাশ ভেবে নিয়েছ। মন খারাপ, কষ্ট, মাত্রা ছাড়ালে ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদে রবি, সেকথা আকাশটাই জানে।
বোনটার কাছে শুনেছে দেশটা, রবিদের গ্রামটা, নাকি পাল্টে গেছে। সদু মোল্লা সেই কবেই সরকার বদলের সাথে সাথেই জেলে গেছে, মরেছেও বছর আট আগে। এত প্রভাবশালী মানুষটার এত দ্রুত নিঃশেষ হওয়া! ভাবায় রবিকে।
আর রুবির মা নাকি এখনো বেঁচে আছে। মেয়ে মানুষের আয়ু বলে কথা! শুধু রবির মায়ের বেলায় উল্টো হয়েছিল। পাপের কারখানাটা বন্ধ হয়েছে, আরো দুটো স্কুল হয়েছে, মেডিকেল কলেজ হচ্ছে পাশের গাঁয়ে। রাস্তাঘাট তো লন্ডনের রাস্তাঘাটের মতো হয়েছে। নিয়নবাতিরা জাগিয়ে রাখে রাতের শান্তিপুর। ঘরে ঘরে শান্তি। মোবাইল এসেছে, দেখেছে রবি। শুধু কি তাই! স্মার্টফোনও দেখেছে, চেপেছে, কি দারুণ জিনিস রে বাপু!
এইতো ছ’মাস আগে এক বড়লোকের ছেলে এসেছিল জেলখানায়, রবির সাথে এক কামরায় থেকেছে। ও-ই মোবাইলের বিষয়গুলো বুঝিয়েছে। ছেলেটা বেশ ট্যালেন্ট, ভার্সিটি পড়ে, রাজনীতি করে; মিথ্যে মামলায় ফেঁসেছে, ছয়মাস থাকতে হয়েছে তবুও। আয়নাবাজি, মনপুরা, মোয়ানা আরো কত সাড়া জাগানো সিনেমা নাকি নাম করেছে দেশে দেশে। হলেও নেমেছিল, দেখেছে ছেলেটা; এমন মাথাব্যথা করা কত ভালো-মন্দ, কষ্টের গল্প শুনেছে, কেঁদেছে, বুঝিয়েছে গল্পকথকদের। ওরা সবাই চলে গ্যাছে, জেল ছেড়ে মুক্ত পৃথিবীতে; রবির শুধু যাওয়া হয় নি।
জেলখানা রবির থেকে সব সাধ-আহ্লাদ কেড়ে নিয়েছে, বিনিময়ে কিছু দেই নি। দেই নি বললে ভুল হবে, ‘পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি’ লম্বা হালকা গড়নের শ্যামলারঙা রবির মুখ ঢেকেছে কাঙ্ক্ষিত চাপ দাড়ি।
সদু মোল্লার ভাইপো রাসুর সাথে বিয়ে হয়েছে সাবিনার। বেশ সংসারী হয়েছে, নারী হয়ে উঠেছে, দুই কন্যার ‘মা’ হয়েছে সাবিনা। ভারি সুন্দর মেয়ে দুটো, পিঠাপিঠি জন্মেছে। বিয়ের তৃতীয় বছরে প্রথম কন্যা, দ্বিতীয়টা চতুর্থ বছরে। সুখের সায়রে ডুবে আছে সাবিনা। সেই সায়রে রবিই থাকতো, যদি সেদিন সাবিনা সত্যটা শুনতো। এমনটা মনে হয় রবির।
সত্যিটা তো রবিও জানলো ক’দিন আগে। রুবির মা আর রাসু কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জানালো সব। রুবিকে প্রেম নিবেদন করেছিল রাসু, ভরা কলেজ মাঠে দু’গালে চড় বসিয়ে দিয়েছে রুবি। কলেজ রাসুকে লাল টিসি দেখিয়েছিল, মানে একেবারে বহিষ্কার।
সুযোগ বুঝে প্রতিশোধটা নিতে হন্নে হয় রাসু। সুযোগটা পেয়ে গেল। অসুস্থ রইজ ঘরে ছিল। তার হাত, মুখ বেঁধে রেখেছিল রাসু। রুবির মা বুড়ো সদুর কাছে গিয়েছে। আশপাশে কোনো বাড়ি না থাকায়, রাত হওয়ায় কাজটা করতে অসুবিধা হলো না রাসুর।
প্রথমে দৈহিক সুখ, তারপর পৈশাচিক সুখ! মুখে বালিশ চাপিয়ে পৈশাচিক সুখটা নিল। হাত-পা লাফিয়েছে কতবার মেয়েটা! বাঁচবার কত চেষ্টা করেছে, পারেনি; ব্যর্থ হয়েছে। ওড়না প্যাঁচিয়ে ফ্যানের সাথে আটকে দিয়েছে লাশটা। তরতাজা মেয়েটা কিভাবে চলে গেল! সেই কথা ভাবলে আজও হয়তো গ্রামের কেউ কেউ কেঁদে ফেলবে।
গর্ভবতী হওয়ার খবরটা ডাহা মিথ্যে। পরপুরুষের সাথে নিজের মাকে পরপর দুদিন আপত্তিকর অবস্থায় দেখলে কোন সন্তান চুপ করে থাকবে? কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের সন্তান সহ্য করবে না, রুবিও করেনি; বাপকে বলে দিয়েছিল। ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছা করেছে রুবির, কিন্তু মরেনি, আবার বাঁচতেও পারেনি। নিজের চরিত্রহীন মা আর রাসু মিলে পরিকল্পনা করে মেরেই ফেললো! একটু ভালো খাবার আর ভালো থাকার লোভে, নতুন শরীরের আহ্বানে, দশবিঘা জমির লোভে, অচল রইজকে ছাড়ে রুজিনা; সদুর ঘরে চলে যায়।
যত সহজে রবি কথাগুলো মনে করতে পারছে আজ, রুজিনা চাচি আর রাসু ততটা সহজভাবে বলতে পারেনি সেদিন, ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছে। শুনেছে আর কেঁদেছে রবি, রবির বোন ববি আর উপস্থিত কেউ কেউ অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছিলো রুবির মাকে, রাসুকে। জঘন্য রকম একটা মুহূর্ত!
কত ভালো বন্ধু ছিল ওরা, রবি আর রুবি। একদিনের কথা খুব মনে পড়ছে। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এসেছে রবি। শরৎকাল। আকাশে আকাশে সাদা মেঘেদের ভীষণ ছড়াছড়ি, ভরা যৌবন পেয়েছে রানার বিলের দুপাড়ের কাশবনে। সাদা সাদা কাশফুল! বিল ভরেছে কচুরিপানার ফুলে।
সেদিন ছিল বুধবার। খাড়া দুপুরে ভাতঘুম দেবার জন্যে শু’লো রবি। হঠাৎ মনে হল রুবির ‘জ্বর’ না কি ব্যামো হয়েছে, মা বলেছে। দেখা না করলে তো মন খারাপ করবে। এদিকে কাল বিয়ানেই রওনা করবে বাবা, শহরে রবিকে নিয়ে যাবে। ইন্টার্নির জন্য সদর হাসপাতালের ডক্টর নায়েম হবীবের সাথে কথা বলবে। সব ঠিকঠাক হলে, রবিকে কাল থেকেই শহরে থাকতে হবে।
অসময় হলেও গেল স্কুল বান্ধুবির বাড়িতে। বাড়িটা এক গ্রাম পরে। রানার বিলের পাশ দিয়ে যেতে হয়। এপাশে শান্তিপুর, ওপাশে রসুলপুর। মাঝখানে চিরযৌবনা রানার বিল। জন্মের পর থেকেই যেমন ‘মাছখনি’ হিসেবে দেখেছে, এখনো ঠিক তেমনই। শোল, শিং, মাগুর, পুঁটি, মলা- হরেক রকম মাছের আনাগোনা।
অনেকদিন পর আঁতেল কবি রবিকে দেখে ক্ষ্যাপালো দু’এক জন। কিছু মনে করলো না রবি। মন ভার করে লাভ কী, এসব মানুষের সাথে? ‘আঁতেল’ শব্দটার মানেই জানে না এরা, যে নামটা দিয়েছে, সেই সদু মোল্লাও জানে না। জানলে তো আর বলতো না। আসলে ও ব্যাটাই একটা আঁতেল!
‘ইউ’ আকৃতির আধা-পাকা বাড়ি। যেমন দেখেছে গত বছর, তেমনটাই আছে।
বিকেল হয়ে আসছে। সারা বাড়ি সুনসান। টু-শব্দটি পাওয়া যাচ্ছে না। রুবির বাবা দোকানে গ্যাছে নিশ্চয়ই, চাচি তাহলে গেল কই? ভাবনা না বাড়িয়ে, মাঝ-আঙ্গিনা থেকে ডাকে, রুবিকে।
‘রুবি, বাড়িত আছিস রে? আমি রবি।’
নাহ! কোনো সাড়া নাই।
আবার ডাকে রবি। এবারো কোনো সাড়া পাচ্ছে না। মায়ের কথা মতোন রুবি নাকি বাড়িতেই আছে, বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেও তো রবিদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে হয়। না, সে পথেও যায়নি। সেকথা ভেবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে, গলা খেকিয়ে, মাঝের ঘরে পা দেয় রবি।
যেমনটা ভাবনা, ঠিক তেমনটাই হলো। রুবি তো কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে, ঘুমোয়নি, জেগে আছে। রবিকে ঘরে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করছে রুবি। এ কি কান্ড! রুবি তো উঠতেই পাচ্ছে না, ধরাধরি করে বসালো। গলা বসে গ্যাছে রুবির, কথাও আসছে না মুখে।
সেই ছোট্টবেলা থেকেই চঞ্চলা মেয়েটা। আজ কেমন নেতিয়ে পড়েছে! ভাইবোনের মতোন মিশতো রবি আর রুবি। পড়াশুনায় রুবি-ই এগিয়ে থাকত। গ্রামের কলেজেই অনার্স পড়েছে রুবি আর রবি মেডিকেলে।
‘আরে বাপ যে! আছো ক্যামন?’
রুবির মা এসে পড়েছে।
জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন তো?
হ, বাপ। আছিত ভালা। তয়, রুবির তো দ্যাখতেছ কি হাল! জ্বরে কাঁপে, কাশে, গলাডা গেইচে কাশতে কাশতে। বিচানা ছাড়ি উটপার না পায়!
সেবার রুবিকে শহরের নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছে সবাই। রবি, জমির মাস্টার আর রইজ চাচা। ভালো হয়েছিল সপ্তাহ খানেকের ওষুধে।
গ.
জেলখানার ঘড়িতে দুপুর একটা।
আজান হচ্ছে, নামাজ পড়বে রবি। গায়ের ‘কয়েদি নং ২৮’ জামা খুলে গোসলে যাবে রবি। ছাড়া পাবে একটু পর, জেলখানা থেকে। রুবি হত্যার দায়ে পাশের কামড়ায় বন্দী হয়ে ঢুকেছে রাসু। আহা রে! জেলখানার ‘ভদ্রতার ডাল, জল খাবার’ ক্যামন লাগে বোঝো এখন!
রবিকে দ্রুত বেরিয়ে যেতে হবে, ববিরা আসার আগেই। গ্রামে যাবে না, অন্য কোনো শহরে চলে যাবে। হ্যাঁ, রবিন ছেলেটার কাছে যাবে। কার্ড দিয়েছিল যাবার সময়। ওষুধের সাথে কারা যেনো ফেনসিডিল চালান করেছিল, সে মামলায় জেল খেটেছে দু’মাস। ওর ওষুধের দোকানেই বসবে।
কে আছে ঐ গ্রামে? মা, বাবা? কেউ নাই। শেষ দেখাটুকু যে দেখতে পেল না, মাটিটুকু দিতে পারলো না বাবা-মার কবরে, তার আবার কিসের বাবা-মায়ের জন্য টান! সাবিনাও তো নাই। নাই বললে ভুল হবে, আছে। সদুর ভাইপো সেই কবেই ছেড়েছে সাবিনাকে। হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে এখন রবিকে খোঁজে সাবিনা। রবির কি সে ডাকে সাড়া দেয়া ঠিক হবে?
না, মোটেও ঠিক হবে না। আর এ বয়সে ওরে নিয়ে লাভেই বা কি! যে মেয়ে ‘নারী’ হয়ে উঠতে মরিয়া হয়েছিল, রবিকে যে বিশ্বাস করেনি, তাকে দিয়ে কি হবে এখন! আর ভালোবাসা, সে তো জঘন্য অনুভূতি! সে অনুভূতি কবেই ভোঁতা হয়ে গ্যাছে।
দুনিয়ায় মেয়ের অভাব নাই। দেখে, বুঝে না হয় একটা বিয়ে করে নেবে রবি। জীবন তো গেছেই, আর বাকি কয়টা বছরও ঠিক কেটে যাবে। জীবনের নিয়মে, নিয়নবাতির ঝলমলে শহরে। কারাবাস কিংবা নিজের জীবন নিয়ে লিখবে না, কখনোই না। আঁধারে ডুবেও মানুষকে পড়াবে সুখের কবিতা। প্রকাশ মাধ্যমের অভাব আছে নাকি এখন! কিছু না থাকলেও ফেসবুক তো আছে, লিখতে শিখবে ওখানে। আঁতেল কবি থেকে না হয় সত্যিই কবি হয়ে উঠবে আর একবার। পৃথিবীটা তো সেই কবেই পর করে দিয়েছে রবিকে। গ্রামে যাওয়া মানেই মায়া বাড়ানো। মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?
রবি সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিদায় নিল জেলখানা থেকে।
আহা রে! আকাশটা কেমন বদলে গ্যাছে! ভেবেছিল বাহিরে বেরিয়ে একটু শান্তি পাবে। একাই বের হবে, না! টিভি আর পেপার সাংবাদিকদের জ্বালায় হাঁপিয়ে যাচ্ছে, বাজে লাগছে; অদ্ভুত লাগছে রবির। হায় রে মিডিয়া! পারবে কি ফিরিয়ে দিতে রবির সেই টগবগে যৌবন?
চোখ ছল ছল করছে নিউজ এডিটর জাবেদের। বুকের ভিতরে কেমন জানি একটা অপরাধবোধ, দুরমুশের মতোন আঘাত করছে। পা চলছে না যেনো! আস্তে আস্তে হেঁটে পা দিল অফিসে। বিশ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার অফিস। সবাই কাজে ব্যস্ত।
নিজের জন্য বরাদ্দ করা কক্ষের চেয়ারে বসে পড়লো জাবেদ। টেবিলের উপরে রাখা ল্যাপটপটা চেয়ে আছে ওর দিকে। ল্যাপটপটা অন করলো জাবেদ, পত্রিকার ওয়েবে গেল। নিউজ পোস্ট বক্সে ক্লিক করলো, হাত রাখলো কীবোর্ডে। ল্যাপটপের স্ক্রিনে গোটা গোটা অক্ষরে ভেসে উঠল– ”আঁতেল কবির কারাবাস ও প্রত্যাবর্তনের গল্প”।