আগে যা ঘটেছে –
কলকাতা থেকে কালীপুজোয় মালদায় মাসির বাড়ি ঘুরতে এসেছে বাবা মা এর সঙ্গে টিপু। সেখানে পরের দিন সবাই মিলে মালদার আশেপাশের ঐতিহাসিক এলাকা ঘুরতে বেড়িয়েছে। সঙ্গে এসেছেন টিপুর মাসি, মেসো আর মাসতুতো বোণ মৌ। অবিভক্ত বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ে দেখতে আসার পথে ইতিহাসের শিক্ষক টিপুর মেসো গাড়ির ভিতরে থাকা প্রত্যেককে গৌড়ের ইতিহাসের নানা ঘটনা শুনিয়েছেন টিপুর মেসো। আজ গৌড় এলাকাতেই টিপুর মেসোর স্কুলের এক কলিগের বাড়িতে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করার নিমন্ত্রন রয়েছে সবার। এরপর………
।। ৩।।
মেসোর স্কুলের সহকর্মী সমীর দাস বেশ মিশুকে মানুষ। তাঁর ছেলে অর্ক টিপুর বয়সী। ওঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে উঠতে সময় লাগেনি টিপুর। মৌএর সাথে তো আগে থেকেই চেনাজানা ছিল অর্কর। দুপুরে সমীরবাবু নিজের বাড়িতেই ওঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
দুপুরে জম্পেশ খাবারের আয়োজন করেছিলেন সমীরবাবু। মুরগির মাংস, সোনা মুগের ডালের সঙ্গে তুলাইপাঞ্জি চালের ভাত থেয়ে তৃপ্তি পেয়েছিল টিপু।সকাল থেকে একটানা বিভিন্ন জায়গাতে ঘোরার সঙ্গে সেভাবে ভারি কিছু পেটে না পড়ায় খিদেও পেয়েছিল বেশ। সমীরবাবুর বাড়ি পৌঁছনোর আগে টিপুরা ঘুরে দেখেছে গৌড়ের দাখিল দরওয়াজা, ফিরোজ মিনার, চিকা মসজিদ, গুমটি দরওয়াজা, লুকোচুরি গেট – এই সব জায়গাগুলি। মেসোই টিপুদের গাইডের দায়িত্বটা সামলেছেন। এসব পুরাকীর্তির ইতিহাস আওড়েছেন। সমীরবাবুর বাড়ি যাওয়ার আগে উত্তমবাবু বললেন, ‘ দুপুরে কিছুক্ষন বিশ্রামের পরে ফেরার পথে আমরা দেখবো লোটন মসজিদ, তাঁতিপাড়া মসজিদ, চাককাটি মসজিদগুলি।’ সমীরবাবু হাইস্কুলের শিক্ষক হলেও গ্রামে নিজের বাড়িতে মেঝেতে আসন পেতেই খাওয়ার আয়োজন করেছিলেন। গৌড় থেকেই প্রতিদিন মালদার স্কুলে যাতায়াত করেন সমীরবাবু।
দুপুরে খাওয়ার খেতে বসে সমীরবাবু আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, ‘গরমের সময় এলে আপনাদের মালদার বিখ্যাত ফজলি আম খাওয়াতে পারতাম। ফজলি আমের ইতিহাসটা এঁনাদের বলেছেন তো,’ মেসোর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন সমীরবাবু।
খেতে খেতে হঠাৎ থেমে মেসো উত্তর দিলেন, ‘সত্যি তো, খুব ভুল হয়ে গিয়েছে। মালদায় এলেন। তাও আবার প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ে। আর মালদার বিখ্যাত ফজলি আম সম্পর্কে কিছুই জানবেন না, সেটা তো খুব অন্যায় হবে! আসার পথে এত আম গাছ দেখলাম, অথচ একবারের জন্যেও ফজলি আমের কথা উঠলো না ! তবে শুনুন এই ফজলি আমের ইতিহাস।’ ইতিহাসের শিক্ষক হওয়ায় একটু বেশি কথা, বিশেষ করে যেখানে ইতিহাস জড়িত রয়েছে, তা বলতে অতি উৎসাহী উত্তমবাবু।
টিপু, মৌ আর সমীরবাবুর ছেলে অর্কের খাওয়া বড়দের আগেই হয়ে গিয়েছিল। পাশের ঘর থেকে ওঁদেরকে খাওয়ার জায়গায় ডেকে নিয়ে উত্তমবাবু বলতে শুরু করলেন, ‘ ফজলি আম আসলে গৌড় এলাকার ফসল। গৌড়ের সুলতান ইউসুফের প্রিয় নর্তকী ছিলেন ফজল বিবি।। সুলতান নর্তকীর জন্য আম বাগানের মধ্যে একটি বড় বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই বাগানের আমের আকার এবং স্বাদ ছিল আলাদা রকমের। ফজল বিবির নামেই ফজলি আমের নাম হয়। এখন সেই ফজলি আম মালদার গর্ব।’
বড়রা আরও নানা ধরনের গল্পে আলোচোনায় মেতে ঊঠলেন। খাওয়ার শেষেও চলতে থাকলো গল্প-গুজব। টিপুর সেই গল্প শুনতে ভালো লাগছিল না। সে অর্ককে বললো, ‘চলো অর্ক, আমরা আম বাগানে ঘুরে আসি।’
ওদের বাইরে যেতে দেখে মৌও সঙ্গে যেতে চাইলো। তিনজন বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে এলো কিছুদূরের আমবাগানে। আম বাগানের গল্প, স্কুলের গল্প, ঝড়ের সময় আম কুড়ানোর গল্প অর্কের কাছে শুনছিল টিপু। গল্প করতে করতে ওঁরা চলে এসেছে বাড়ির থেকে বেশ অনেকটাই দূরে। এই আম বাগান এখানেই শেষ। দূরে মাটির ঢিবি। পাশের ধানের গাছের পরেই আবার শুরু হয়েছে অন্য একটি আম বাগান।
অর্ক বললো, ‘এখান থেকে বাংলাদেশের বর্ডার খুব কাছে। এদিকে তেমন লোকজন আসে না। আমাদেরও বাড়ি থেকে আসতে দেওয়া হয়না। আজ তোমরা এসেছো, তাই চলে এলাম। তবে বাবা জানতে পারলে বকবে’।
টিপু আগে কোন দিন দেশের বর্ডার দেখে নি। বাংলাদেশের বর্ডারের কথা শুনে এবং সেটা খুব কাছে জেনে, টিপুর কৌতুহল হচ্ছিল। সে বললো, ‘চলো না, বাংলাদেশ বর্ডার দেখে আসি !’
আৎকে উঠলো অর্ক, ‘না না, আমি যাবো না। তোমরাও যেও না। তার চেয়ে ভালো, চলো বাড়ি ফিরে যাই।’
মৌ বললো, ‘ধ্যাৎ, তোমাদের বাড়ি এখন ফিরে কি হবে ! শুধু বাবার বকবকানি শুনতে হবে। বকবকানি শুনে শুনে আমার তো মাথা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।’
টিপু প্রস্তাব দেয়, ‘তার চেয়ে চলো ওই মাটির ঢিবির উপরে উঠে বসে গল্প করি। কি রে, মৌ যাবি ?’
‘তাই চলো,’ বলে মৌ হাটতে শুরু করলো অর্ক আর টিপুর সঙ্গে।
।। ৪।।
অক্টোবর মাস শেষ হতে চললেও রোদের তাপ কমেনি। তবে ঢিবির একধারে কিছুটা রোদ কম রয়েছে। ছায়ায় বসে গল্প করার জন্য ওঁরা ঢিবির উপরে উঠেছিল। সামনে অর্ক, তার পিছনে টিপু। তারপরে মৌ। ঢিবিটা বেশ উঁচু। অর্ক অনর্গল কথা বলতে পারে। আম বাগানে ঝড়ের পরে কিভাবে আম কুড়ানো যায়, দুবছর আগে আম কুড়াতে গিয়ে অর্ককে সাপে কেটেছিল, কিভাবে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেই গল্প অর্ক বলে হাঁটতে হাঁটতে বলে চলেছিল। টিপু শুনতে শুনতে ঢিবির উপরে উঠছিল। ওঁদের কারোই নজর ছিল না মৌ এর দিকে। হঠৎ একটা আর্তনাদ শনে অর্ক আর টিপু পিছনে ফিরে দেখলো মৌ নেই। তবে আর্তনাদ যে মৌ এর ছিল তা বুঝতে পেরে ওঁরা ছুটে এলো নীচের দিকে।
তখনই গর্তটা নজরে পড়লো টিপুর। পাতলা মুলিবাঁশের জাল দিয়ে তার উপরে মাটি বিছিয়ে রাখা হয়েছিল। যাঁরা একাজ করেছিল, তাঁরা যে সাধারন মানুষের চোখের আড়াল তৈরি করতে চেয়েছিল, সেটা বুঝতে অসুবিধ হয়নি টিপুর। মৌ এই নরম মাটিতে পা দিতেই যে গর্তে পড়ে গিয়েছে, টিপু অর্ক দুজনেই বুঝতে পারল। দুজনে মিলে হাল্কা করে দেওয়া মাটি হাত দিয়ে সরিয়ে নীচের দিকে ঝুঁকে তাকানোর চেষ্টা করলো। গর্তটা কিছুটা সোজা কুয়োর মতো নেমে নীচের দিকে বেঁকে যাওয়ায় অন্ধকারে মৌকে দেখা যাচ্ছেনা। তবে ওঁরা নিশ্চিত যে, এই গর্তেই মৌ পড়েছে।
টিপু সিদ্ধান্ত নিলো, সে গর্তে নামবে। তবে গর্তটা কতটা গভীর সেটা আন্দাজ করতে পারছিল না। কিন্তু মৌ কে তো উদ্ধার করতে হবে! চাই ‘যা থাকে কপালে’ ভেবে নিয়ে অর্ক কিছু ভেবে ওঠার আগে নিজেই গর্তের মধ্যে লাফ দিল টিপু। যতটা গভীর ভেবেছিল টিপু, গর্তটা ততটা গভীর নয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পা এর নীচে মাটির স্পর্শ পেল সে। তবে নীচের দিকে গর্তের বেড় অনেক চওড়া। কিছুক্ষন পরে পাশে ধুপ শব্দের আওয়াজ পেয়ে টিপু বুঝতে পারলো, অর্ক নীচে নেমে এসেছে।
মাথার উপরে তাকিয়ে টিপু দেখলো আকাশ দেখা যাচ্ছে। এক চিলতে আলো এসে ঢুকেছে গর্তটার মধ্যে। সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে, গর্তের নীচ থেকে নারকেলের ছোবড়ার দড়ির তৈরি ঝুলন্ত মই উঠে গিয়েছে উপরের দিকে। টিপু নিজের মনে বললো, ‘তারমানে এখানে নিয়মিত কেউ ওঠানামা করে।’ টিপু ফিসফিস করে অর্ককে বললো, ‘খবরদার অর্ক, জোরে কোন শব্দ করবে না। তোমার কোন কথা বলারও প্রয়োজন নেই।’
গর্তের পাশে আবছা অন্ধকারে একটি সুরঙ্গের মতো জায়গা নজরে এলো টিপুর। অন্ধকার এখন অনেকটা চোখ সয়ে গিয়েছে। অর্ককে ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে টিপু হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলো সুরঙ্গের মধ্যে।
সুরঙ্গের মতো পথে ডানদিকে গিয়ে টিপুর নজরে এলো জায়গাটি বেশ চওড়া। অন্ধকার অখন অনেকটাই চোখ সয়ে গিয়েছে। অন্ধকারে নজরে এলো সেখানে কয়েকটি ছোট ছোট পিচবোর্ডের বাক্স একধারে সাজানো রয়েছে। সুরঙ্গের উচ্চতা এখানে এতটাই, যে একজন প্রমান মাপের মানুষ এই পথ দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। সামান্য আলোতেই টিপু দেখলো,কিছু দূরে একটা ছোট মাপের কাঠের দরজা ভেজানো রয়েছে। দরজাটি সামান্য ফাঁকা। নিশ্চই ঘরের দরজা এটা। কারন ঘরের ভিতরে আলো জ্বলছে, সেটা টিপু বুঝতে পারছে।
টিপু এবার ভালো করে নজর দিতে দেখতে পেলো, মৌ দরজার ফাঁকা দিয়ে ঘরের ভিতরে উঁকি দিচ্ছে। মৌকে দেখে আশ্বস্ত্ব হয়ে টিপু দরজার দিকে এগিয়ে মৌকে নিয়ে উপরে উঠে পালিয়ে যাবে, ভেবে মৌএর দিকে এগিয়ে গেলো। মৌ অবশ্য এখনও টিপুকে দেখতে পায়নি। মৌ একমনে মাটিতে বসে ঘরের ভিতরের দৃশ্য দেখছিল। টিপু এগিয়ে গিয়ে মৌএর মাথার উপর দিয়ে ঘরের ভিতরে নজর দিতেই দেখতে পেলো, তিনজন লোক ঘরের ভিতরে বসে দুটো চামড়ার ব্যাগের ভিতরে টাকার বান্ডিল ভরছে। ছাদ নীচু ঘরের একধারে দুটি কালো রঙের বড় ব্যাটারির থেকে তার লাগানো থাকায় জ্বলছে একটি টিউব লাইট।
লোক দুজন একমনে দুটো ব্যাগে টাকা ভরে চলেছে। অন্যজন অনেক টাকা থেকে বান্ডিল করে ব্যাগে ঢোকানোর জন্য ওঁদের হাতে দিচ্ছে। মাটির নীচে এই সুরঙ্গের ঘরে এত টাকা এবং এতটা গোপনের সঙ্গে এঁরা কেন ভরছে, সেটা ভেবে পাচ্ছিলনা টিপু। নিজের হৃদপৃন্ডের আওয়াজ যেন নিজের কানে শুনতে পারছিল টিপু। উত্তেজনায় টিপুর খেয়ালই ছিলনা তাঁর পায়ের কাছে মৌ বসে রয়েছে। মালদায় যে জালনোট প্রায়ই ধরা পড়ছে, টিপু সেখবর কলকাতায় বাড়িতে থাকতে টেলিভিশনে দেখেছে। এগুলো কি তবে জালনোট ! বিষয়টি ভালো করে দেখতে যেতেই টিপুর পা গিয়ে ঠেকলো মৌ এর শরীরে। আর তখনই ঘটলো যত বিপত্তি !
মৌ শরীরে কিছু ঠেকতে ভয়ে চিৎকার করে উঠে হুড়মুড় করে গিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরের ভিতরে। আচমকা ঘরে এক অচেনা বাচ্চা মেয়েকে ঢুকতে দেখে হকচকিয়ে গেলো ঘরের ভিতরে থাকা তিনজনই। টিপু তখনও দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজের এই আচরনে এই দূর্ঘটনা ঘটায় টিপুর মাথা তখন কাজ করছে না! তবে তাঁর মনে হলো, যেভাবেই হোক, এই সুরঙ্গ থেকে পালাতে হবে। যাঁরা মাটির নীচে বসে বান্ডিল বান্ডিল টাকার নোট ব্যাগে ভরছে, তারা আর যাইহোক, ভালো মানুষ হতে পারেনা ! ওদিকে সুরঙ্গের নীচে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে অর্কও। তাঁর মন বললো, যেকোন উপায়ে এখান থেকে পালাতে হবে !
যে দুজন টাকার বান্ডিল ব্যাগের মধ্যে ভরছিল, তাদের একজন মৌকে ধরে নিতেই, টিপু সুরঙ্গের পথ দিয়ে ছুটলো উলটো দিকে। তাঁর মনে তখন একটাই চিন্তা, যেভাবে হোক, বাড়ি পৌঁছে মৌএর খবর বাড়ির লোকজনকে দিতে হবে !
ঘরের ভিতর থেকে তিনজন লোকের চাপা হুঙ্কার শুনতে পেলো টিপু। সঙ্গে মৌএর চিৎকারও। লোকগুলোর ভাষা পরিস্কার বুঝতে না পারলেও, মৌ চিৎকার করে চলেছে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে ছেড়ে দাও’। এবার অন্য একজনের গলা পরিস্কার শুনলো টিপু। সে বলছে, ‘এই বাচ্চা মেয়েটা তো এই এলাকার নয়। এ একা আসেনি। সঙ্গে আরও কেউ নিশ্চই আছে। তোরা বস্কে ফোন কর। আমি বাকিটা দেখছি।’
টিপু বুঝতে পারলো একজন তাঁর পিছু নিয়েছে। সে আঁধো অন্ধকারের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি দৌঁড়তে পারছিল না। এদিকে যে পিছু নিয়েছে, সে যে আরও কাছে চলে এসেছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি টিপুর। প্রানপনে সুরঙ্গের মুখের দিকে এসিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল সে। যেখান থেকে সুরঙ্গ শুরু হয়েছে, সেখানে এসে টিপু দেখলো, অর্ক সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। এত ঘটনার সে তো কিছুই জানেনা। একটু দেরি হলেই পিছনে আসা লোকটির কাছে ধরা পড়বে দুজনেই। কাকুতি মিনতি করে টিপু বেশ জোরেই অর্ককে বলে ফেললো, ‘আমরা ধরা পড়ে গিয়েছি। তাড়াতাড়ি আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে। দড়ির মই দিয়ে উপরে ওঠো।’ কথাটি বলেই টিপু নিজেই আগে দড়ির মই বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করলো।
গোটা ঘটনায় অর্কা এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিল, যে টিপুর ‘ধরা পড়ে যাওয়া’, ‘পালাতে হবে’ এসব কথায় ঘাবড়ে গিয়ে অর্ক দড়ির মই বেয়ে উপড়ে উঠতে গিয়ে পা হড়্কে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। টিপু তখন মই বেয়ে অনেকটা উপরে উঠে এসেছে। নীচের দিকে তাকিয়ে টিপু দেখলো, অর্ক মাটিতে পড়ে রয়েছে, তাঁকে ধাওয়া করে আসা লুঙ্গি পড়া খালি গায়ের লোকটি ক্রুর দৃষ্টিতে তাঁর দিকে দেখছে।
টিপু কোন মতনে দড়ির মই দিয়ে ঢিবির উপরে উঠে ঢিবির মাটির ঢালের জন্য দ্রুত নেমে যাচ্ছিল আম বাগানের দিকে। পিছনে ফিরে টিপু দেখলো, তাঁকে ধাওয়া করা লোকটিও উপরে উঠে এসেছে। বিকালের সূর্যের আলোয় তাঁর হাতে চক্চক করছে কালো রঙের পিস্তল। মুহুর্তে টিপুর কান ফাটানো আওয়াজের সঙ্গে পাশের আম গাছের গুড়িতে কি যেন এসে লাগলো। টিপু বুঝতে পারলো, তাঁকে ধাওয়া করা লোকটি হাতের পিস্তল থেকে গুলি ছুঁড়ছে। টিপু দৌঁড়ের স্প্রিড আরও বাড়িয়ে দিল।
(চলবে)