জারোয়াদের জঙ্গলে

নাগেশ্বর গাড়ি মাঝপথে এক জায়গায় থামিয়ে টিটোদের উদ্দেশ্যে হিন্দিতেই বললো, “ওই যে ফাঁকা এলাকা দেখা যাচ্ছে, সেখানে সুনামির সময় সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে গিয়েছিল। একারনে এই জমিতে আর ফসল চাষ করা যায়না। আন্দামান জুড়ে এরকম অনেক জমি পড়ে রয়েছে”।

কলকাতায় দেওয়া কথা মতো পোর্টব্লেয়ারে বীর সারভারকর ইণ্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ঠিক সময়ে গাড়ি নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছিল রহিতদা। টিটোরা যখন এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে রহিতদার দেখা পেল, তখন ঘড়িতে এগারোটা বেজে গিয়েছে। টিটোদের বারাটাঙে তাঁর অফিস কোয়াটারে নিয়ে যেতে রহিতদা স্ক্ররপিও গাড়ি নিয়ে এসেছিল। সঙ্গে ছিল ড্রাইভার নাগেশ্বর রাও। টিটোদের সামান্য মালপত্র গাড়িতে তুলে গাড়ি রওনা দিল বারাটাঙ এর দিকে। পোর্টব্লেয়ারের রাস্তাঘাট বা দোকানপাট দেখে টিটো অবাক হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল না ভারতের মূল ভূখন্ডের বাইরের একটি দ্বীপের শহর এত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে পারে। তবে প্লেনে ওঠার থেকেই, সেই যে বইটা নিয়ে পড়ছিল হীরু, প্লেন থেকে নেমেও সেটা বন্ধ করেনি। আর সেই থেকেই রহিতদার গাড়িতে উঠে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসেছে সে।  গাড়ি তখন শহর ছেড়ে বেরিয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় চলে এসেছে। মাঝেমাঝে নারকেল আর সুপারি গাছের জঙ্গল চোখে পড়ছিল টিটোর। গাড়ির সামনের সিটে ড্রাইভার নাগেশ্বরের পাশে বসেছে রহিতদা। রহিতদা টিটোর কাছ থেকে আন্দামানে আসতে দেওয়ার জন্য মা কি কি ধরনের ঝামেলা করেছিলেন, সব গল্প শুনছিল আর নিজেই হেসে হেসে উঠছিল। ড্রাইভার নাগেশ্বরও বুঝতে পেরেছে টিটোরা রহিত স্যারের গেষ্ট। সেও সেই গল্প শুনে বেশ মজা পাচ্ছিল, তা তাঁর মুখের হাসি দেখে টিটো আন্দাজ করতে পারছিল। নাগেশ্বর নাম শুনেই বুঝতে পেরেছিল, সে দক্ষিন ভারতীয়। টিটোরা যখন এর আগে একবার দক্ষিন ভারত ঘুরতে গিয়েছিল, তখন সাউথ ইন্ডিয়ানদের সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা  হয়েছিল। কিন্তু এখানে নাগেশ্বরের আচরন দেখে মনে হচ্ছে, সে বাংলা ভাষা বুঝতে পারছে। তবে কথা বলছে হিন্দিতে। কলকাতার প্লেন থেকে নেমে গাড়িতে এতক্ষন প্রায় চুপ করেই ছিল হীরু। আসলে সে একটা বই পড়ছিল। জারোয়াদের নিয়ে লেখা এই বইটা সে কলকাতা থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। এবার হীরু মুখ খুললো। প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা, রহিতদা, পাঠান জারোয়া বিষয়টা ঠিক কি ?”

প্রশ্ন শুনে রহিতদা তো অবাক !

“ ওরে বাবা। পাঠান জারোয়া তো এখনও সাংঘাতিক থেকে গিয়েছে। আন্দামানের অন্যান্য আদিবাসীরা এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পাঠান জারোয়ারা এখনও পুরোপুরি আদিম রয়ে গিয়েছে। এদেরকেই তো বলে সেন্টিনেলি। নাম শুনিসনি তোরা !” বলে গাড়ির সামনে দেখে আবার পিছনে ফিরে রহিতদা বললো, “ ওঁরা থাকে নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডে। কলিনপুর বিচ থেকে দেখা যায় ওই আইল্যান্ড। ওঁরা এখনও হিংস্র। ওই আইল্যান্ডের কাছাকাছি গেলেই বড় বড় তীর ছুঁড়তে শুরু করে। আমি কখনও সেন্টিনেল আইল্যান্ডে যাইনি।

অনেক আগে একবার ভারত সরকার চেষ্টা করেছিল সেন্টিনেলিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। দু-একবার আমাদের ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন দারুন সাহসী গবেষক চেষ্টা করে ওদের দ্বীপে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়নি। ওঁরা সেন্টিনেল আইল্যান্ডে বাইরের লোকজনে আনাগোনা পছন্দ করেনা। তবে আমরা যেসব জারোয়াদের নিয়ে কাজ করি তারা কিন্তু অনেক স্বাভাবিক হয়েছে এখন। যদিও এখনও পুরোপুরি মূলস্রোতে ফিরতে পারেনি। তবে হিংস্র নয়।”

 

 

 

আসলে টিটোর সঙ্গে পাহারাদার হিসাবে হীরু রহিতের আন্দামানের অফিসে এসেছে। টিটোর আসা নিয়ে কলকাতার বাড়িতে কম ঝামেলা হয় নি। সেদিন বাবা সন্ধ্যায় অফিস  থেকে ফিরে আসার পরেই মা বাবার ভীষন ঝগড়া হয়েছে। বাবা মার  ঝগড়ার কারন আর কিছু নয়। টিটোর আন্দামানে ঘুরতে যাওয়ার বিষয়। মা কিছুতেই টিটোকে তাঁর মাসতুতো দাদা  রহিতের সঙ্গে আন্দামানে যেতে দিতে চাইছিলেন না। আর বাবা এই ব্যাপারে টিটোর পক্ষ নিয়ে কথা বলাতেই অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল। বাবার বক্তব্য, টিটো এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। নিজের বোধবুদ্ধি হয়েছে। সে ঘুরতে যেতেই পারে। আর সে তো একা সেখানে যাচ্ছে না। আন্দামানে রহিতদার রয়েছে। টিটো রহিতের ওখানে কয়েকদিনের জন্য ঘুরতে যাচ্ছে।

রহিতদার নিজস্ব কোয়াটার রয়েছে আন্দামানের বারাটাঙ-এ। রহিতদাও কথা দিয়েছে টিটোকে সেখানে নিয়ে গেলে ওঁর কোন অসুবিধা হতে দেবে না। জুন মাসে আন্দামানে গরম হয় ঠিকই, তবে রহিতদার নিজের কোয়াটারে এয়ার কন্ডিশন মেশিন রয়েছে। টিটোর গরমে কোন কষ্ট হবে না। সঙ্গে রহিতদা টিটোকে ভারতের আদিম মানুষদের দেখিয়ে দিতে পারবে। রহিতদা বলেছিল, এত কাছের থেকে আদিম ভারতবর্ষ দেখার খুব বেশি সুযোগ টিটো ভবিষ্যতে আর পাবে কি না সন্দেহ। টিটোর প্রতি ছোট ভাইয়ের মতো  ভালোবাসা থেকেই এই অফারটা দিয়েছিল রহিতদা।

মাসখানেক আগে রহিতদা ছুটিতে আন্দামান থেকে কলকাতার বাড়িতে যখন এসেছিল, রহিতদা আক্ষেপের সঙ্গে মা-কে বলেছিল, “ তোমাদের তো অনেকবার আন্দামানে আমার ওখানে ঘুরতে যেতে বলেও লাভ হয়নি। তোমরা তো আর গেলেই না। অথচ প্রতিদিন কত বাঙালী, এই কলকাতা থেকেই আন্দামানে ঘুরতে যাচ্ছে। একবার যদি যেতে তবে বুঝতে পারতে, আমি কেন বারবার ওখানে তোমাদের যাওয়ার নিমন্ত্রন করছি”। মা-এর দিকে তাকিয়ে রহিতদা বলেছিল, “ বুঝলে মাসি, আমি তো কাজ করি আন্দামানের আদিবাসীদের নিয়ে। যাঁরা এখনও বর্তমান জগত  থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই যে কলকাতা, যেখানে রাতে রাস্তায় ঝলমলে আলো, শপিং মল বা গাড়ি-মেট্রো রঙ বেরঙের পোষাকের লোকজন, যা ওখানকার আদিবাসীরা চিন্তাই করতে পারেনা। দেখেইনি এসব। ভাবতেও পারেননা।”

চা খেতে খেতে রহিতদা বলেছিল, “শুধু কি ওই আদিম ভারতবর্ষ না কি ! কত সুন্দর সি বিচ রয়েছে আন্দমানের নানা জায়গাতে। দেখে মনে হবে যেন বিদেশে ঘুরতে এসেছো। তাছাড়া খোদ পোর্টব্লেয়ারেই তো রয়েছে ইতিহাস বিখ্যাত সেলুলার জেল। যা আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। আমি এত বছর আন্দামানে রয়েছি, তোমরা একবারের জন্যও এলে না”।

সেই সন্ধ্যায় মা বাবার সঙ্গে টিভি দেখছিলেন। সেসময় তাঁদের বাড়িতে দেখা করতে এসেছিল রহিতদা। রহিতদাকে দেখে টিটোও পড়া ছেড়ে এসে বসেছে আন্দামানের গল্প শুনতে। রহিতদার কাছে আগেও আন্দামানের গল্প শুনেছে টিটো। স্বপ্নের মতো বিভিন্ন দ্বীপের ছবি সে ইন্টারনেটে দেখেছে। তেমনই দেখেছে রহিতদার কাছে শোনা আদিম ভারতবর্ষের বাসিন্দা জারোয়াদের ছবিও। রহিতদার কাজ তো ওই জারোয়াদের নিয়েই।

 

 

 

টিটোর মাসতুতো দাদা রহিত দে ভারত সরকারের নৃতত্ত্ববিদ। প্রাচীন সেই ভারতে এখনও সভ্যতার আলো যেখানে পৌঁছয়নি, সেই জারোয়াদের নিয়ে কাজ করে রহিত। তাঁর দফতরে এন্ড্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এ এস আই )-তে রহিতের সঙ্গে চাকরি করেন আরও কয়েকজন। ওদের অফিস, কোয়াটার সবই আন্দামানের বারাটাঙ  নামের এক জায়গাতে। প্রতিবার ছুটিতে বাড়িতে এসে রহিত টিটোদের আন্দামান ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কখনও বাবার অফিসের ছুটির সমস্যা, নয়তো মা-র শরীরের বাহানায় আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। এবারও রহিতদা মাসি মেসোকে একই ভাবে আন্দামানে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে চলেছে। বলেছিল, “শুধু পোর্টব্লেয়ার কেন, আরও কত প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্য যে ছড়িয়ে রয়েছে আন্দামান জুড়ে ভাবতে পারবে না। সমুদ্রের নীচে গিয়ে প্রবালের পাহাড়, নানা রং-বেরঙের মাছ সব দেখতে পাবে। আর আন্দামানে এত বাঙ্গালী রয়েছে, যে তোমরা বাংলার বাইরে ঘুরতে গিয়েছো তা মালুমই হবে না। তাহলে এবার যাচ্ছো তো আমার সঙ্গে ?”

বাবা কিছু বলে ওঠার আগেই টিটোর মা বলে উঠেছিলেন, “ আমি বাপু চাই না ওই কালাপানি পেরিয়ে দ্বীপান্তর হতে। আর আন্দামান তো শুনেছি খুব সাংঘাতিক জায়গা। এই যে তোরা যাদের নিয়ে কাজ করিস, তারা তো হিংস্র, বর্বর। মানুষকে মেরে মানুষের মাংসও খায় বলে শুনেছি। আমার কোন শখ নেই এই ধরনের ট্যুরে যাওয়ার। তারচেয়ে আমি বরং আরও একবার শিমলা ঘুরে আসবো ! আন্দামানে আমি তো যাবই না, আমার পরিবারের কাউকেই যেতে দেব না। ”

তবে, বাবা টিটোর যাওয়া নিয়ে আপত্তি করেননি। মা-র রাগের কারন সেটাই । সেরাতে রহিতদা টিটোদের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরেই শুরু হয়েছিল অশান্তি। মা-র বক্তব্য ছিল, জারোয়ারা সব হিংস্র, বর্বর। বিষ মাখানো তীর ধনুক নিয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। পোষাক পরে না। উলঙ্গ হয়ে থাকে। এসব দেখলে টিটোর কিশোর মনে উলটো প্রতিক্রিয়া হবে। ঝগড়ার সময় মা চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমি তো দুপুরেই উপরের ফ্ল্যাটের মিসেস চ্যাটার্জীর কাছে শুনলাম কি বিভৎস ভয়ংকর জারোয়ারা। মিসেস চ্যাটার্জীরা দল বেঁধে পুলিশের পাহারায় জারোয়াদের জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওঁরা নাকি উলঙ্গ জারোয়াদের দেখে কলা বা খাবার না দেওয়ায় বিষ মাখানো তীর ছুঁড়েছিল ওঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে। গাড়ির কাঁচ বন্ধ থাকায় চ্যাটার্জীদের কিছু হয়নি। কি ভয়ংকর ! আমি কিছুতেই টিটোকে ওখানে যেতে দেবনা।”

বাবা বারবার মা-কে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, যা শুনেছেন, তা অতিরঞ্জিত করে বানানো গল্প। এমন কিছু হলে এতদিন ধরে রহিত কিভাবে সেখানে চাকরি করছে। সেটা আবার সেই জারোয়াদের নিয়েই। মা-র তবু সেই একই বক্তব্য। বাবা এবার মা-র উপরে খেপে উঠে বলেছিলেন, “আমি যখন বলছি, টিটো যাবেই।”

রহিতদার সঙ্গে আন্দামান ঘুরতে আসা নিয়ে বাবা মা-র ঝগড়ার সমাপ্তি হয়েছিল যখন বাবা টিটোর সঙ্গে পিসতুতো দাদা হীরু কে আন্দামানে পাঠানোর মা-র পরামর্শে রাজি হয়েছিলেন। টিটো এখন ক্লাস এইটে পড়লেও হীরু এবার বি বি এ তে ভর্তি হয়েছে। ওঁর পড়াশোনার বিশেষ ক্ষতি হবেনা আর এভাবে প্রাচীন ভারতের আদিম মানুষদের কাছ থেকে দেখতে পাবার সুযোগ হীরু হাতছাড়া করতে চায়নি। ফলে টিটোর বাবার এক প্রস্তাবে সে রাজি হয়ে গিয়েছিল। আর খুব বেশি দিন তো না,

 

 

সব মিলিয়ে দিন পনেরোর ব্যাপার। তাছাড়া কলকাতা থেকে পোর্টব্লেয়ারের যাওয়ার প্লেনের টিকিটও যখন কেটে দিয়েছেন টিটোর বাবা। ফেরার টিকিটের টাকা দিয়ে দিয়েছেন ওঁদের হাতে। টিটোর আন্দামানে আসা নিয়ে বাবা মা-র সঙ্গে ঝামেলার কারনে রহিতদার সঙ্গে টিটোর আসা সম্ভব হয়নি। রহিতদার ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছিল। টিটো এসেছে পরে, হীরুদার সঙ্গে।

হীরুদার সঙ্গে টিটোর বয়সের ফারাক যাই হোক না কেন, হীরুদাকে একদম পছন্দ  করেনা টিটো। টিটোর মনে হয়, হীরুদা নিজেকে ভীষন বিজ্ঞ মনে করে। হীরুদার এই আচরন টিটো কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। তবু হীরুকে সঙ্গে নিলে যদি ওঁর আন্দামান যাওয়ার রাস্তা সহজ হয়, তাই আর আপত্তি তোলেনি টিটো। টিটোকে নিয়ে আন্দামান যেতে হবে জানতে পেরে সেখানকার ইতিহাস প্রায় মুখস্ত করে ফেলেছে হীরুদা। যা শুনতে শুনতে ক্লান্ত টিটো জীবনের প্রথম প্লেন জার্নির ঘণ্টা দুয়েকের মজা নিতে পারেনি। তবে রহিতদা কলকাতা থেকে আন্দামান রওনা দেওয়ার আগেই জেনে গিয়েছিল, টিটোর সঙ্গে আন্দামানে হীরু আসছে। কবে, কখন ওঁদের প্লেন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে তা জেনে কলকাতাতেই টিটোদের ফোনে কথা বলে বাবা-মা কে আশ্বস্থ করেছিল।

“আমি থাকতে তোমার কোন চিন্তা নেই। আর একটা কথা খেয়াল রাখবে মাসি। আন্দামানের সব জায়গাতে সেল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়না।  আর পাওয়া গেলেও দু-একটা কোম্পানীর ছাড়া সেখানে অন্য কোন নেটওয়ার্ক কাজ করেনা।” রহিতদার উত্তর দিয়েছিল।

পোর্টব্লেয়ারে প্লেনে চেপে যাওয়ার সময়  হীরুদা যে জারোয়াদের বিষয়ে পড়ছিল,  তা বোঝাতে আন্দামানে পৌঁছেও রহিতদার সঙ্গে গাড়িতে বসে টিটোকে বলতে থাকলো, “যা বলছি, মন দিয়ে শুনে যা। আন্দামানের এই আদিম মানুষের ইতিহাস কিন্তু বহু পুরানো। এরা কিভাবে এই দ্বীপগুলিতে এসেছে, তা নিয়েও বির্তক রয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত ভূ-বিদ্যা বিশারদ টলেমি থেকে মার্কোপোলো – প্রত্যেকেই এদের একেক রকমভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ এদের চেহারার বর্ননা দিয়ে, আবার কেউ এদের পোষাক না পরার কারন হিসাবে আলাদাভাবে লিখেছেন। কেউ বলেছেন, জঙ্গলের মানুষখেকো জন্তুদের সঙ্গে ওদের কোন তফাৎ নেই। এইসব বিখ্যাত মানুষদের লেখা পড়ে সারা পৃথিবীর মানুষের ধারনা হয়েছিল ওঁরা বর্বর, নরমাংস ভোজী ক্যানিবল। আফ্রিকার জঙ্গলবাসী মানুষদের বা আন্দামানের অরন্যের প্রাচীন জনজাতিদের সম্পর্কেও এধরনের ধারনা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছিল।”

ওঁদের কথা মন দিয়ে শুনছিল রহিতদা। সামনের দিকে তাকিয়েই বললো, “বাস্তবে কিন্তু ওঁরা ওধরনের একদম নয়। একমাত্র সেন্টিলেনি ছাড়া। সেন্টিলেনিদের আমরা এখনও সভ্য জগতের আশেপাশে নিয়ে আসতে পারিনি। তোরা তো বারাটাঙে গিয়ে নিজেরাই জারোয়াদের দেখতে পারবি।”

এবার বেশ ব্যস্ত হয়েই ড্রাইভার নাগেশ্বরকে রহিতদা বললো, “ এঁরা তো প্লেন থেকে নেমে কিছুই খায়নি। এখনতো চেকপোষ্ট বন্ধ। ওখানেই এদেরকে কিছু খাইয়ে নিতে হবে। এরপর তো জঙ্গলে আর কিছু পাবেনা।”

 

 

“আমাদের কাছে শুকনো খাবার রয়েছে রহিতদা”, কথার প্রসঙ্গ টেনে উত্তর দিল টিটো, “আমাদের না খেলেও ক্ষতি নেই”।

রহিতদা বললো, “সামনেই ঝিলকাটাঙ। মানে সেখানে চেকপোষ্ট। সেখান দিয়েই জারোয়া রির্জাভ ফরেষ্টের ভিতরে ঢুকতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরেপরে একবার  করে চেকপোষ্ট খোলে। তখন গাড়ি ভিতরে ঢুকতে পারে। আমাদের সরকারি গাড়ির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। খুব প্রয়োজনে উপরওয়ালার অর্ডারে আলাদাভাবে আমাদের জন্য চেকপোষ্ট খোলা হয়। এখন তো সেটা হবেনা। আর ওর ভিতর দিয়েই গিয়েছে আন্দামান ট্রাঙ্করোড। সংক্ষেপে আমরা বলি এ টি আর। সেই রাস্তায় তো গাড়ি থামানো যাবেনা। তোদের বাথরুম করার থাকলে করে, কিছু খেয়ে নে। চেকপোষ্ট খুললেই আমরা জারোয়া রির্জাভ জঙ্গলের ভিতরে ঢুকবো”।

 

 

 

 

।। ২ ।।

সকালে ঘুম থেকে জেগেই ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে টিটো দেখলো চারদিক রোদে ঝলমল করছে। পাশের বিছানায় তখনও ঘুমোচ্ছে হীরুদা। হীরুদার দিকে তাকিয়ে টিটো ভাবলো, হীরুদা তো তাঁকে সব বিষয়েই এত জ্ঞান দেয়, সেই হীরুদা এখনি আন্দামানে এসে বারাটাঙের গেষ্ট হাউসের বিছানায় ঘুমোচ্ছে। অথচ টিটো না থাকলে এটা কি হীরুদার পক্ষে সম্ভব হতো ! গতকাল দুপুরে ঝিলকাটাঙ থেকে চেকপোষ্ট পেরিয়ে এ টি আর দিয়ে গাড়ির কনভয়ে আসার সময় তো বিস্ময়ে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল টিটো। পাহাড়ি সর্পিল পথে ছুটে চলেছে গাড়ির কনভয়। গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। এত ঘন জঙ্গল এর আগে কোনদিন দেখেনি টিটো। রাস্তার দু-পাশে আকাশ ছোঁয়া কালচে সবুজ শ্যাওলা ধরা বড় বড় গাছের জঙ্গল। জঙ্গলের মধ্যে বিচিত্র সোঁদা গন্ধ। টিটোর মনে হচ্ছিল, আদিম পৃথিবীর রহস্যময়তা যেন এখানে আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে। গাড়ির কনভয় এঁকেবেঁকে চলেছে রাস্তা দিয়ে। কিন্তু চলন্ত গাড়িতে টিটোকে জ্ঞান দিয়ে চলেছে হীরুদা। বাধ্য হয়ে রহিতদা হীরুদাকে চুপ করিয়ে দিল। “ওরে, এত কথা বললে তো জঙ্গলের মজাটাকেই নিতে পারবিনা। রাস্তার আশেপাশে ভালোভাবে নজর রাখ। যদিও এখন দুপুর হয়ে গিয়েছে। তবুও তোদের ভাগ্য ভালো থাকলে এই রাস্তাতেই জারোয়া দেখতে পাবি”।

রহিতদার কথা শেষ হতে না হতেই কথা বলে উঠলো গাড়ির ড্রাইভার নাগেশ্বর। “ওই দেখুন, বাম দিকে। জারোয়া হেঁটে আসছে”।

 

 

কথা শোনা মাত্রই হীরুদা উত্তেজিত হয়ে ‘কোথায়, কোথায়’ বলে গাড়ির জানালার কাঁচ নামাতে শুরু করেছে। সঙ্গে সঙ্গে নাগেশ্বর নিষেধ করে বললো, “জানালার কাঁচ নামাবেন না। কাঁচের ভিতর থেকেই দেখুন’। তারপরে নিজেই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, “ওই দেখুন দুটো জারোয়া রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে আসছে”। এবার দেখতে পেয়েছিল টিটোরা। আসলে ঘন সবুজ জঙ্গলের রঙের সঙ্গে এতটাই মিশে গিয়েছিল বেঁটে, খাঁটো দুই জারোয়া, যে ওদের বুঝতে সময় লেগেছিল। জারোয়া দুটো হেঁটে চলে গেল টিটোদের গাড়ির ঠিক পাশ দিয়ে। একবারের জন্য ফিরেও তাকালো না ওঁদের দিকে। একজন পুরুষ জারোয়া। অন্যজন মেয়ে জারোয়া। পুরুষ জারোয়াটির হাতে ছিল তীর ধনুক। তবে কোন উদ্ধত আচরন ছিল না জারোয়া দু’জনের মধ্যে। বেতের মতো নির্মেদ টানটান শরীরে একমাথা কোঁকরানো ঘনচুল। তবে এঁরা কিন্তু সম্পূর্ন উলঙ্গ ছিল না। মেয়ে জারোয়াটির পরনে শরীরের নীচের অংশে ছিল লাল কপড় এর টুকড়ো। কিন্তু শরীরের বাকী অংশে কোন পোষাক ছিলনা। মাথায় ছিল লাল রঙের ফিতা বাঁধা। পুরুষ জারোয়ার খালি গা দেখে টিটোর মনে হয়েছিল, পৃথিবীর এক দেশের ক্রিকেট খেলোয়ারদের সঙ্গে গায়ের রঙ, চুলের মিল রয়েছে। তবে জারোয়া দুটোই লম্বায় অনেক খাঁটো ছিল। পেশিবহুল চেহারায় পুরুষ জারোয়ার পরনে ছিল একই রকমের কোমরের নীচে লাল রঙের ছোট কাপড়। এর মাথাতেও ছিল লাল রঙের ফিতা বাঁধা। দুই জারোয়ার গলাতেই ছিল, কি সব দিয়ে তৈরি নানারকমের কয়েকটি মালা। আর দুজনের মুখেই সাদা ছাই বা চন্দনের মতো কিছু দিয়ে নানা দাগ আঁকা ছিল।

রহিতদার কথাতে টিটোর বিস্ময় কাটলো। “দেখলি তো, এঁরাই হচ্ছে জারোয়া। অতি সাধারন। এঁদের আক্রমন না করলে এঁরা নিজেরা কখনও আক্রমন করেনা। আর এদেরকে নিয়েই আমাদের মেন ল্যান্ডের মানুষের মধ্যে কত রটনা। তোরা থাকবি তো আমার সঙ্গে বারাটাঙে কয়েকদিন। আরও ভালো করে দেখতে পাবি অনেক জারোয়াদের”।

এরপর বারাটাঙ পর্যন্ত রাস্তায় আর কোন জারোয়া দেখতে পায়নি টিটোরা। বারাটাঙে রহিতদার অফিস কাম কোয়াটারে পৌঁছে স্নান সেরে ভাত খেয়ে নিয়েছিল ওঁরা। তবে কোয়াটারে পৌঁছনো মাত্র, রহিতদার চাকর ডাব কেটে সেই ডাবের জল খাওয়ার জন্য রেখে দেয়েছিল। ডাবের পেল্লাই সাইজ দেখে টিটো তো অবাক ! হীরুদা তো বলেই বসলো, “এগুলো ডাব, না অন্য কিছু ! সাইজে তো আমাদের ওখানকার ছোটখাটো এঁচোরের মতো”। যেমন ডাবের সাইজ, তেমন সুস্বাদু সেই ডাবের জল। একটা ডাবের জল খেয়েই পেট ভরে গিয়েছিল টিটোর। তারপর ডাবের ভিতরের নারকেল তৈরি হওয়ার আগের কচি অংশ যখন কোয়াটারের চাকর কেটে টিটোকে দিয়েছিল, তা খেয়ে তো টিটোর আরও হাঁসফাঁস অবস্থা।

রাতে প্রায় সাড়ে সাতটার মধ্যেই রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিল টিটোরা। বারাটাঙ রাত সাতটাতেই এত নিস্তব্ধ আর অন্ধকার, কলকাতাতে চিন্তাই করা যায়না। সারাদিনের জার্নির ধকলে রাতে টিটোর ঘুমও হয়েছে ভালোই।

বিছানা থেকে নেমে টিটো বাইরে এসে দেখতে পেল রহিতদার চাকর নারায়নকে।  গতকালই নারায়নের নাম জানা হয়ে গিয়েছিল। সেও বাঙালী। তাই কথা বলতে কোন আসুবিধা হচ্ছিল না টিটোর। টিটো গতকালই শুনেছিল, নারায়নরা আগে

 

 

 

ছিল পূর্ববঙ্গে। দেশ ভাগের পরে নারায়নদের পরিবার সহ গ্রামের সব লোকজনকে জাহাজে চাপিয়ে আন্দামানে পাঠিয়ে দিয়েছিল ভারত সরকার। তখন অবশ্য নারায়ন বয়সে অনেক ছোট ছিল। নারায়নের জন্যই গতরাতে বাঙালী রান্নার স্বাদ পেতে কোন অসুবিধা হয়নি টিটোদের। এখন নারায়নের কাছেই টিটো জানতে পারলো, রহিতদা  অফিসে গিয়েছে। দুপুরে আসবে। এখানে সকাল সাতটা থেকেই অফিস শুরু হয়ে যায়। দুপুরে কিছুক্ষনের জন্য রেষ্ট। তারপর আবার বিকালে অফিসে যেতে হয় রহিতদাকে। নারায়নের কাছেই টিটো জানতে পারলো, রহিতদা ওদের জন্য বলে গিয়েছে, স্নান খাওয়া করে বিশ্রাম নিতে। দুপুরে এসে ওদের সঙ্গে কথা বলবে রহিতদা।

রহিতদার অফিস কোয়াটার একই ক্যাম্পাসে। মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেস হয়ে টিটো ভাবলো, একবার রহিতদার অফিস থেকে ঘুরে আসবে কি না ! কিন্তু রহিতদা তাঁর অফিসে যাওয়া কিভাবে নেবে, সেটা ভেবে আর গেলনা। এরমধ্যে হীরুদা ঘুম থেকে উঠে আবার সেই বইটা খুলে নিয়ে বসেছে। ঘরের বারান্দায় দুটো প্লাষ্টিকের চেয়ারে পাশাপাশি বসে হীরুদা ফের শুরু করলো, “বুঝলি টিটো, কাল যে জারোয়াদের দেখলি, জানিস বহু বছর আগে এদের ক্রীতদাস হিসাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিক্রি করা হতো। আর সেই কাজটা করতো মূলত…” টিটো এবার বিরক্ত হয়ে রীতিমতো খেঁকিয়ে উঠে বললো, “তুমি একটু থামবে হীরুদা। সেই কাল থেকে যে শুরু করেছো, আর ভালো লাগছে না। এই নিরিবিলি নিস্তব্ধ জায়গার শান্তি একটু উপভোগ করতে দাও না ! চুপ করো প্লিজ”।

টিটোর রাগ দেখে হীরুদা আর ওঁকে কোন কথা না বলে বইএর দিকে মন দিল। ঠিক  তখনই টিটো দেখতে পেল, রহিতদার সঙ্গে আরও এক ভদ্রলোক কোয়াটারের প্যাসেজ দিয়ে ওঁরা যেখানে বসেছিল, সেদিকে আসেছে। কাছে এসে পরিচয় করিয়ে দিয়ে রহিতদা বললো, “ইনি প্রণবেশ পুরকায়স্থ। ত্রিপুরার লোক। আমার সহকর্মী। আর এঁরা হলো…” টিটোদের পরিচয় দিল রহিতদা। প্রথম আলাপেই জমে উঠলো প্রণবেশবাবুর সঙ্গে। উনি বেশ সদালাপি মানুষ। কিছুক্ষনের মধ্যেই টিটো, হীরুদার সঙ্গে ভাব জমিয়ে নিয়েছেন। তখনই টিটোরা বিস্তারিত জানতে পারলো, রহিতদাদের অফিসের কাজ হলো আন্দামানের আদিবাসী জারোয়াদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাঁদের চিকিৎসা, রেশন, জামা কাপড় ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করা। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই আদিবাসী জারোয়াদের বাঁচিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা করা হচ্ছে। জারোয়াদের নিয়ে নিজের নানা রকম অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়ে জমিয়ে দিলেন প্রণবেশবাবু।

প্রণবেশবাবুর সঙ্গে টিটোদের আড্ডা যখন বেশ জমে উঠেছে, তখনই স্নান সেরের ঘরে ঢুকলো রহিতদা। রহিতদাকে উদ্দেশ্য করে প্রণবেশবাবু বললেন, “আগামীকাল তো আমরা লাকরা লুংটা গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে যাচ্ছি। টিটো আর হীরুকে কি সেখানে নিয়ে যেতে পারিনা আমরা ! এতে ওরা ভালোভাবে জারোয়াদের দেখতে পাবে ! আপনি এবিষয়ে কি বলছেন রহিতবাবু ?”

 

 

 

 

প্রণবেশবাবুর কথায় রহিতদার মুখে হাল্কা হাসি দেখা গেল। “ আমিও যে বিষয়টা একদম ভাবিনি, তা নয়। কিন্তু সেটা কি উচিত হবে ! প্রত্যন্ত জারোয়াদের গ্রামে সিভিলিয়ানদের ঢোকা বারন রয়েছে। এই কাজ করতে গেলে উপর মহলের অনুমতির প্রয়োজন দরকার হবে। আর এঁরা তো দু’জনেই এখনও ছাত্র। যদি সেখানে কিছু একটা অঘটন ঘটে যায়, তবে উপর মহলে তো বটেই, এঁদের বাড়ির লোকজনের কাছেও আমাকে কথা শুনতে হবে। তবুও দেখছি, কিছু করতে পারি কি না।”

“কিচ্ছু করার প্রয়োজন নেই। ওঁরা যেতে চাইলে আমিই ওদেরকে নিয়ে যাবো” নাছোড় হয়ে জবাব দিয়ে টিটোর দিকে ফিরে বললেন প্রণবেশবাবু, “ আমিই তোমাদের সব দায়িত্ব নেবো। শুধু খুব সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে পড়তে হবে। একজন ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ওই গ্রামে জারোয়া ছেলেমেয়ে, বুড়ো বুড়ি সহ বাচ্চাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে যাবো। তোমরাও চাইলে আমাদের সঙ্গে থাকবে। কোন ভয় নেই”।

এরপর বেশ কিছুক্ষন আলাপ আলোচনার পরে ঠিক হলো, আগামীকাল ভোরে রহিতদাদের অফিসের ডাক্তার সহ কয়েকজন যে মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে জারোয়াদের গ্রামে যাবে, সেই দলে টিটো আর হীরুও থাকবে। তবে প্রণবেশবাবু বারবার টিটোদের সাবধান করে দিলেন, যে তাঁরা যেন ভুলেও কোন মেটাল বা ধাতুর তৈরি কোন জিনিষ সঙ্গে করে না নিয়ে যায়। এমনকি খুচরো পয়সাও নয়। কারন জারোয়াদের ধাতু বা মেটালের তৈরি জিনিষের উপর মারাত্মক আকর্ষন।

(চলবে)

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত