সুপ্রিয় অনি

এগারো

‘তোর কি মনে হয় বই পড়ে বা মুভি দেখে কেউ খারাপ হয়?’
আজমাইনকে প্রথমবারের মতো অপ্রস্তুত হতে দেখে অনি। ধীমানের প্রশ্নের উত্তরটা যেন জানা নেই ওর, এমন শূন্য দৃষ্টিতে আজমাইন বন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকে। শুধু অপ্রস্তুত না, গুড বয় টাইপ ধীমানের আত্মবিশ্বাসী মুখটা ওকে একটু ঘাবড়েও দিয়েছে বলে মনে হয়।
‘কী, বল, কখনো কি দেখেছিস বই পড়ে কেউ খারাপ হয়েছে?’
ধীমানের পাতলা ঠোঁটে হাসির সরু রেখা এবার প্রসারিত হয়।
‘আমার বাবা কী বলে জানিস? বলে, বইয়ের কোনো খারাপ ভালো নেই, বরং বইই আমাদের খারাপ ভালো খুঁজে নিতে সাহায্য করে।’
নিজেকে এবার যেন খুঁজে পায় আজমাইন, অনির ফিরিয়ে দেওয়া ম্যাগাজিনটা ব্যাগ থেকে ক্ষিপ্রগতিতে বের করে ধীমানের হাতে দিয়ে বলে, ‘এত জ্ঞান ফলাস না, আর এতই যদি বুঝিস, এতই যদি লিবারেল তোর বাবা, নে ধর, এই ম্যাগাজিনটা নিয়ে তোর বাবার সামনে বসে পড়িস।’
ধীমান ম্যাগাজিনটার কভারে চোখ বুলিয়ে হাসে।
‘ও এই তাহলে তোদের দুজনের ফিসফিসানির কারণ!’
বিব্রত অনি নতমুখে নিজেকে ব্যাখ্যা করে।
‘তুই তো জানিস, এইসব পর্ণ ম্যাগাজিন পড়ার মানুষ আমি না, আজমাইন একরকম জোর করেই ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে…।’
আজমাইন জিভ-ঠোঁট বাঁকা করে ভেঙচি কাটে।
‘হ্যাঁ, এখন তো আমার দোষ সব, নিজের তো পড়ার ইচ্ছে ছিল ষোলআনা। আমি না হয় জোর করে দিলাম, তুই কেন জোর করে ফিরিয়ে দিলি না? ন্যাকা!’
অনি কথা খুঁজে পায় না। সত্যিই তো ও না করেনি। ম্যাগাজিনটা আজমাইনকে জোর করে ফিরিয়ে দেয়নি। কেন পারেনি? নিজেকে প্রশ্ন করে যেই উত্তরটা পায় তা বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করতে পারে না বলে থুতনিটা বুকের কাছে আরও ঠেলে দেয় অনি।
ধীমান বুঝি বা বন্ধুর মনের কথা সব বুঝতে পারে। অনির পিঠে হাত রেখে ধীর কণ্ঠে বলে, ‘তুই এমন করছিস কেন? আমাদের এই বয়সে এমন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বা আকর্ষণ থাকা স্বাভাবিক, এতে অন্যায় নেই কোনো। তুই কেন মন ছোট করছিস? আর তুই যদি এমন কোনো বই পড়িস বা ম্যাগাজিন দেখিস তুই কি খারাপ হয়ে গেলি? যারা খারাপ ভালোর পার্থক্য করতে পারে না তারাই এসব পড়ে নিজেকে সামলাতে পারে না।’
অনি ধীমানের দিকে তাকায়, ওর দৃষ্টিতে সমীহ। এই বয়সে কত কিছুই না বুঝে গেছে ধীমান, ওর চিন্তা-ভাবনার ব্যাপ্তি দেখে স্বস্তিতে ওর মন ভরে যায়। অনি আজ সত্যি সত্যি বুঝে যায়, একমাত্র বইই মানুষকে এমন উদার করে, বড় করে।
(চলবে)

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত