আমি দূর্বা

 

বাইরের আকাশ সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। ভাঙা জানালার ফাঁক গলিয়ে ঝকঝকে এক টুকরো আলো টেবিলে এসে পড়েছে। টেবিলে পড়া ওই আলোটুকু ছাড়া ঘরের বাকি কোণগুলো অন্ধকারে ঢাকা। বাইরের রোদ থাকলেও গরম নেই সেই রোদে, তাই ঘরের ভেতর এক অদ্ভুত ঠান্ডা আমেজ বিরাজ করছে। এমন আবহাওয়াতে মেজাজ থাকে ফুরফুরে। অসীম মুখার্জী ফুরফুরে মেজাজ নিয়েও টেবিলে বসে একের পর এক এ-ফোর সাইজ পেপার নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না।

অথচ এমন একলা, অনাবিল শান্তি আর কোলাহলবিহীন পরিবেশে সব শিল্পী চর্চা করে তাদের নিজ নিজ প্রতিভা। তবে তার মনে এক অশান্তি বিরাজ করছে। স্পষ্টই মনে হচ্ছে, তার দ্বারা আর নতুন কিছু লেখা সম্ভব নয়। আজকাল যেমন হুটহাট লেখকের আমদানি হয়, তারপর আবার কোথায় যেন হারিয়ে যায় সেই সব লেখকেরা। সে নিজেও হারিয়ে যাওয়া লেখকের দলেই পড়ে। প্রথম গল্প বের হওয়ার পর তিন বছর পার হয়ে গেছে। প্রথম গল্প যখন বের হলো, তখন পাঠক মহলে চারদিকে শুধু অসীম মুখার্জীর নাম। কিন্তু এরপর অনেক চেষ্টা করেও নতুন কোনো গল্প লিখতে পারেনি অসীম। মাঝে মাঝে পাঠকদের নতুন গল্প চেয়ে আবদার করাটা তার কাছে কাকের কা কা শব্দ ছাড়া কিছুই মনে হয় না। কোলাহলময় বগুড়া শহরে তার নতুন লেখা হয়ত হবে না ভেবেই সে শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে নিরিবিলি বারোপুর গ্রামে চলে এসেছে। দিনের বেলায় বাঁশের ঝাড়ে বসে শালিকের ডাক আর নিচের ছায়ায় বসে থাকা মোরগ-মুরগির ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দই শোনা যায় না। তবুও অসীম লিখতে পারে না।

মনকে শান্ত করে পেন্সিলের মাথা কাগজে ঘষে কয়েকটা অক্ষর লিখে কাগজ দলা পাকিয়ে ফেলে দিল। টেবিলের উপর থেকে গোল্ডলিফ সুইচ তুলে নিয়ে, তাপে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া দুই ঠোঁটের মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে লম্বা টান দিল। সিগারেটে টান দিয়ে অসীম চিন্তা করল, তার মানসিক স্থিরতা একেবারেই নেই। প্রয়োজনীয় মানসিক দৃঢ়তা আর নিজের প্রতি আস্থার একান্ত অভাব রয়েছে তার। আর এই আস্থার অভাবই তার লেখক হয়ে ওঠার ক্যারিয়ারকে আঘাত করেছে, তা স্পষ্ট। সিগারেটে আরেকটা টান দিতেই মাথায় নতুন একটা প্লট এল। বাম হাতের আঙুলের ফাঁকে আধ পোড়া সিগারেট ধরে সে লিখতে শুরু করল।

“সেঁজুতি”—পারিবারিক টানাপোড়েন, এক নারীর লড়াইয়ের গল্প। না, এক লাইনের বেশি সে আর কিছুই লিখতে পারল না। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে সিগারেটে ঘনঘন টান দিল অসীম।

সিগারেটের ধোঁয়ায় পুরো ঘর ভরে উঠেছে। ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো এক ষোড়শী কন্যা। রোদের আলোয় টেবিলে বসে থাকা অসীমের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে ঘরে ঢুকে আবেগে ভরা কন্ঠে বলল, “আপনাকে গতকাল মাঠে আসতে বলেছিলাম। এলেন না কেন, শুনি?”

অসীম মুচকি হেসে সিগারেটের লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলল, “গ্রামে তোমার সাথে হাঁটাহাঁটি বেশি করলে লোকে খারাপ বলবে।”

ঠোঁট উলটিয়ে মেয়েটি বলল, “এই দূর্বা কার সাথে হাঁটাহাঁটি করল আর কার সাথে করল না, এতে গ্রামের লোকের বলার কি আছে!”

অসীম দূর্বার দিকে তাকালো। রঙচটা কমলা রঙের শাড়ি পড়েছে দূর্বা। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ হলেও দূর্বার সৌন্দর্য অতুলনীয়। ডাবা চোখে অদ্ভুত এক মায়া রয়েছে। ওই চোখের দিকে যতবার অসীম তাকিয়েছে, ততবারই অতলে ডুবে গেছে। আর সেই দিন তো ঝোঁকের বশেই চুম্বন করেছিল সে।

দূর্বা দরজা থেকে সরে গিয়ে জানালা খুলতে খুলতে বলল, “ঘর অন্ধকার করে রাখার কোন মানে দেখছি না। এই যে, আপনি সারাদিন ভর লেখালেখি করতে ব্যস্ত থাকেন, আলস্য আসে না শরীরে?”

অসীমের উত্তরের অপেক্ষা না করেই দূর্বা আবার বলে ওঠে, “এতো লেখালেখি করে হবেটা কি বলুন তো!”

“তুমি লেখালেখির কিছু বুঝো না, তাই এই সব বলছ। লেখালেখি কিছু মানুষের অন্তর আত্মা থেকে আসে। নিজের এবং সমাজের অব্যক্ত কথা ফুটে তোলা যায় লেখায়। লেখালেখি করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় নীরবে। তুমি কি তা জানো? অবশ্য, এই সব তোমার জানবার কথা না। অল্প বয়সে বাংলাদেশের নারীরা এসব বুঝতে পারেনা। এই বয়সে নারীদের মন প্রেমের জোয়ারে পড়ে থাকে।”

মুখে ভেংচি কেটে দূর্বা বলল, “ভুল বললেন। কে বলেছে আমি লেখালেখি নিয়ে কিছুই জানি না! আমি বই পড়তে পছন্দ করি।”

“বই পড়তে পছন্দ করা আর লেখালেখির সম্পর্কে জানা, দুটোই আলাদা। তুমি বুঝবে না।”

ঠোঁট উল্টিয়ে দূর্বা বলল, “লেখালেখি বিষয়ে জানতে হলে গাঁজা খেতে হয় নাকি!”

হটাৎ গাঁজা খাওয়ার কথা কেন বলছ? লেখালেখির সাথে এর কি সম্পর্ক?

“কোন সম্পর্ক নেই। শুনেছি, শিল্পীরা তখনই ভালো কিছু করতে পারে যখন তারা নেশায় থাকে। কোন গায়ক নাকি আছে! সে গান করতে স্টেজে উঠার সময় গাঁজা খেয়ে স্টেজে উঠে গান করে।”

অসীম বিরক্তবোধ করল। দূর্বা যে হুটহুট একেকটা প্রসঙ্গ তুলে, যার কোন আগামাথা থাকে না। কিন্তু মেয়েটির এমন সহজে যেকোনো কথার মাঝে অন্য কথা ঢুকিয়ে অবলীলায় অনর্গল উল্টোপাল্টা বকবক করতে পারে—এটাই অসীমের ভালো লাগে।

অসীমের মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে দূর্বা বলল, “কি হলো, আমার দিকে ওইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

“না, এম্নিতেই।”

দূর্বা কিছু বলতেই যাচ্ছিল, তখনই বাইরের থেকে বুড়ো হরিদাসের গলা শোনা গেল। দূর্বা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যায়। বুড়ো হরিদাস যদি তাকে অসীমের ঘরে দেখে, তাহলে আর রক্ষে নেই। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে লুকানোর কোনো জায়গা খুঁজে না পেয়ে খাটের তোলায় গিয়ে শুয়ে পড়ে দূর্বা।

দূর্বার এমন কান্ড দেখে অসীমের খুব মজা লাগে। হরিদাস ঘরে ঢুকে অসীমকে হাসতে দেখে বলল, “কি হয়েছে বাবা? তুমি একলা একলা হাসছো কেন?”

“না, কাকাবাবু, কিছু হয়নি। একটা মজার চরিত্র লিখতে গিয়ে হাসছিলাম।”

“ওহ, তাই কও। সে যাকগে, যেডা কবার আসছিলাম বাবা। তোমার বাবা ফোন দিছিল। বাড়িতে তোমার বোন রাণীর বিয়ের ঘর নাকি আইছে। তোমারে যাইতে কইছে।”

অসীম অবাক হয়ে বলল, “বাবা তো আমাকে ফোন দেয়নি।” টেবিল থেকে ফোন হাতে তুলে নিয়ে অসীম দেখল তার ফোন বন্ধ। ওহ! শিট ম্যান।ফোনটা যে কখন বন্ধ হ’য়ে আছে খেয়াল করিনি।

হরিদাস চলে গেলে দরজা লাগিয়ে, অসীম এসে হাসতে হাসতে বলল, “তুমি নাকি ভয় পাও না, তাহলে খাটের নিচে ঢুকলে কেন?”

খাটের নিচ থেকে বের হতে নিয়ে বুক থেকে আঁচল সরে যায় দূর্বার। দূর্বার বুকের দিকে তাকিয়ে অসীমের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। আঁচল ছাড়া ষোড়শী নারীর ফুটন্ত বুক যেন তাকে কাছে টানে। লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে আঁচল ঠিক করে দূর্বা। দুজনের নিরবতা যেন ঘরের ভেতর উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়।

অসীম গলা নিচু করে জিজ্ঞেস করল, “আমি কিছুক্ষণ আগেই সিগারেট খেয়েছি। তোমার কি গন্ধে কোনো সমস্যা হবে?”

মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে দূর্বা শুধু “না” উচ্চারণ করতেই, অসীম ঝট করে দু’পা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে, সাড়া মুখে চুম্বন করে। দূর্বা ভেবেছিল, প্রথম দিনের মতো আজকেও হয়তো শুধু চুম্বন করবে অসীম। কিন্তু তার সেই ধারণা কিছুক্ষণ পরেই ভুল প্রমাণিত করে, অসীম দূর্বার বুকের আঁচল সরিয়ে উন্মুক্ত করে সুডৌল স্তন যুগল। দূর্বার ষোড়শী যৌবনের রস যেন এক নিমেষেই পান করে অসীম।

নগ্ন শরীরে দূর্বাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে অসীম। প্রথম যৌবনের বাঁধভাঙা সুখ যে দূর্বাকেও ভেসে নিয়ে গেছে, তার প্রমাণ দূর্বার ঠোঁটের কোণে সুখের হাসি। অসীমকে সরিয়ে দিয়ে ব্যথায় জর্জরিত শরীর টেনে বিছানা থেকে নেমে শাড়ি পড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় দূর্বা।

 

TO BE CONTINUE…

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত