এক.
-খাইছে আমারে!
রূপক আৎকে উঠে অস্ফুট শব্দে কথাটা উচ্চারণ করল । ওর চেহারায় একই সাথে বিস্ময় আর অনিশ্চয়তা; কন্ঠে হতাশা। বিস্ময়ের কারণেই এই বিদেশ বিভুইয়ে অনিচ্ছাকৃত মাতৃভাষা ব্যবহার।
-কিছু বললে?
মঙ্গোলিয় উচ্চারণের ইংরেজীতে পাশ থেকে জারা জিজ্ঞেস করল।
উজবেক তরুণী রূপকের উচ্চারিত খাঁটি পূর্বাঞ্চলীয় ধাচের এই জটিল বাংলা বাক্যের কিছুই বুঝতে পারেনি। অবশ্য জারার বলা ইংরেজী ভাষাও রূপককে একটু কষ্ট করে বুঝে নিতে হচ্ছে। মধ্য এশীয়রা ট বর্গীয় বর্ণবিশিষ্ট শব্দগুলিও ত বর্গীয় বর্ণ দিয়ে উচ্চারণ করে। যার ফলে একটু অতিরিক্ত মাথা খাটিয়ে বুঝে নিতে হচ্ছে।
-না না, কিছু না। তুমি মন দিয়ে গাড়ী চালাও।
রূপক হতাশা আড়াল করার চেষ্টা করল। মেয়েটা দক্ষ হাতে গাড়ী চালাচ্ছে। এই মুহুর্তে ওরা একটা শেভ্রোলেট কোবাল্ট এ করে তাসখন্দ থেকে সমরখন্দের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছে। প্রায় সোয়া তিনশ কিলোমিটার সড়ক পথ পাড়ি দিতে হবে। তাসখন্দ থেকে সমরখন্দ পর্যন্ত হাই স্পিড রেললাইন আছে। অনায়াসে দু’ঘন্টায় যাওয়া যেত। তবে জারার জেদে গাড়ীতে রওনা হতে হয়েছে। এখন অতিরিক্ত আরও দেড় ঘন্টার ভ্রমণ ঘাড়ে চেপেছে। রূপক বুঝতে পারছেনা জারা কি ওর সঙ্গ পাবার সময় বাড়াতে সড়ক পথ বেছে নিয়েছে নাকি ওকে একা ট্রেনে যেতে দিতে আপত্তি।
-মি. রূপক, তুমি কি গাড়ীর জার্নিতে অস্বস্তি বোধ করছ?
রূপক কোন উত্তর দিচ্ছেনা দেখে আবার বলল
-চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি ভাল ড্রাইভ করি। আর এই শেভ্রোলেট এর মালিক আমার তিরানব্বই বছর বয়েসী দাদু হলেও এটি কিন্তু লেটেস্ট প্রোডাকশন; দুই হাজার সতেরর ফ্যাক্টরী রিলিজ। আশা করি ভ্রমণের সময়টা তোমার খুব খারাপ কাটবেনা।
-না ঠিক আছে। আমি অস্বস্তি বোধ করছিনা। কোন সমস্যা নেই। কীপ গোয়িং।
রূপকের অতি কৈফিয়ত জারাকে আরো বেশী সন্দিগ্ন করে তুলছে।
ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি এখন। তাসখন্দের আজকের তাপমাত্রা তের ডিগ্রী সেলসিয়াস। প্রয়োজনীয় গরম পোশাক যদিও গায়ে আছে; তবুও এখানকার ঠাণ্ডাটা একটু অন্য রকম। মনে হয় হাঁড়ে গিয়ে লাগছে। কানাডায় এরচেয়েও বেশী ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় থাকতে অভ্যস্ত রূপক। কিন্তু আজ একটু বেশীই গায়ে লাগছে। মিনিস্ট্রি বিল্ডিং থেকে বের হয়ে গাড়ীতে আসতে আসতেই প্রচন্ড ঠাণ্ডার একটা ঝাপটা লেগেছিল। আরেকটু হলে বাঙ্গালী বাবু প্রায় কাবুই হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এখন আর খারাপ লাগছেনা, গাড়ীতে হিটার অন করা আছে বিধায় বাঁচা। রূপকের এমনিতেই ঠাণ্ডার ধাত্। তার উপর ধুলোবালি মার্কা পরিবেশ হলেতো আরও দুই কাঠি বাড়া হয়। পুরো অনুসন্ধান শেষ করতে সামনে আরও কী কী ভোগান্তি যে কপালে আছে কে জানে!
বাংলাদেশের সাথে উজবেকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় রূপককে ভারত হয়ে উজবেকিস্তানে আসতে হয়েছে। নয়া দিল্লী থেকে সরাসরি সমরখন্দের ফ্লাইটে আসলে অনেকখানি সময় ও কষ্ট বেঁচে যেত; কিন্তু কিছু সরকারী অনাপত্তির বিষয় জড়িত ছিল বিধায় উজবেকিস্তান এয়ালাইন্সে নয়াদিল্লী থেকে সরাসরি তাসখন্দ যেতে হয়েছে। সেখানে মিনিস্ট্রিতে অনুমোদন সংক্রান্ত ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছে। জারাকে আগেই জানানো ছিল। এখন তাসখন্দের মিনিস্ট্রি বিল্ডিং থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে সমরখন্দের উদ্দেশ্যে চলছে ওরা। জারার সাথে ইতিপূর্বে রূপকের যতটুকু যোগাযোগ হয়েছে তার সবটুকুই ইমেইলের মাধ্যমে, ফলে কন্ঠস্বর আগে শোনা হয়নি। ছবিতে যেমন দেখা গিয়েছিল বাস্তবে তার চাইতেও সুন্দর দেখতে জারা। কালো চুল আর ধারালো চেহারা দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিল রূপক। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে টাইট জিন্সের সাথে লোমশ ওভারকোট পড়ে আছে জারা। মাথায় একটা ওলের টুপি চাপানো। ভারী ওভারকোট সত্ত্বেও ওর দেহ সৌষ্ঠব আৎকে উঠার মতই। রূপকের ‘খাইছে আমারে’ বলার এই হল আসল কারণ। কিন্তু যথাসম্ভব নিজের চিন্তাধারা আড়াল করে রেখেছে সে। জরুরী আর স্পর্শকাতর কাজে উজবেকিস্তানে এসেছে রূপক; সুন্দরী নারীর রূপে মুগ্ধ হয়ে উজবুক সাজা একেবারেই যে চলবেনা তা ভাল ভাবেই জানে ।
অনেকক্ষণ থেকে উইন্ডস্ক্রীণ দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে রূপক। চুপচাপ বসে থাকা ভাল দেখায়না। খুক খুক করে একটুখানি কেশে বলল
-মিস জারা, যদি কিছু মনে না কর তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
-হ্যাঁ অবশ্যই। বল।
– আমি আশা করছি আমার কথায় বিব্রত হবেনা তুমি।
জারা উইন্ডস্ক্রীন দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কান খাড়া করে রেখেছে। রূপক বলল
-আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম সাধারণ উজবেক মেয়েদের সাথে তোমার চেহারার মিল এর চেয়ে অমিলই বেশী।
-যেমন?
-যেমন তোমার চোয়াল তেমন উঁচু আর চওড়া নয়, মুখমণ্ডল মাংশল নয়, নাকও যথেষ্ট সরু, ঠিক মিলছে না। তোমাকে বরং গড়পরতা উজবেক মেয়েদের চেয়ে বেশী সুন্দর দেখাচ্ছে। আমার মনে হয়না পর্যবেক্ষণে কোন ভুল করেছি আমি। ব্যাপারটা কী বলতো।
জারা শব্দ করে হেসে উঠল। হাসিটার মধ্যেও অদ্ভুত একটা সুর ঝংকার লক্ষ্য করা যায়। বলল
-গবেষণা অনুসন্ধান এসব কাজে তোমার ভবিষ্যত উজ্জল দেখতে পাচ্ছি। হ্যাঁ; তোমার পর্যবেক্ষণ প্রশংসার দাবী রাখে। বিষয়টা তোমাকে গোড়া থেকে জানতে হবে। মি. রূপক, তুমি কি জান উজবেক ভাষায় ‘জারা’ শব্দের মানে কি?
-দু:খিত,না।
-‘জারা’ শব্দের মানে হচ্ছে রাজকন্যা। আমি থার্ড জেনারেশন উজবেক। আমার দাদী একজন ইরানী মহিলা ছিলেন। তিনি ইরানের খ্যাতিমান শাসক নাদির শাহের বংশধারার ছিলেন। আশা করি আমার চেহারা আর নামের বিষয়টা আপাতত তোমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। বাকীটা তুমি বুড়ো সুলেইমান আদহামের কাছে শুনে নিও।
রূপক পরিস্কার দেখতে পেল কথা শেষ হয়ে গেলেও জারার মুখে মুচকি হাসির আভাটুকু রয়ে গেছে। গাল দু’টোতেও গোলাপী ভাব পরিস্ফুট হয়ে আছে। কথা বলার সময়টাতে জারার গাড়ী চালনায় এতটুকু অমনোযোগ বা বিচ্যুতির আভাস দেখা যায়নি। বরং ফাঁকা রাস্তা পেলেই গতি ঘণ্টায় নব্বই কিলোমিটারের কাছাকাছি তুলছে। একরকম বাতাসের বেগে ধেয়ে চলা। ক্ষণে ক্ষণে রূপকের মনে হচ্ছে সে আরব্য উপন্যাসের জাদুর কার্পেটে করে ভেসে চলেছে। পাশে সুন্দরী রাজকন্যা বসে। যদিও রাজকন্যাটি আরবীয় নয় বরং উজবেক-পারসি সংমিশ্রণের এক অপরূপ মূর্তি।
আচমকা গাড়ীর গতি কমে যেতেই কল্পনার জাদুর গালিচা থেকে বাস্তবের শেভ্রোলেট কোবাল্টে ফিরে আসতে বাধ্য হল রূপক। রাস্তার পাশে জনসমাগম দেখা যাচ্ছে। লোকজনের মাঝে মৃদু উত্তেজনা। জানতে চাইল
-রাস্তার পাশে মানুষের জটলা কীসের জারা?
-স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচন আছে। সোজা ভাষায় রাজনৈতিক সমাবেশের প্রস্তুতি।
-ভাল ভাল, এখানেও আছে তাহলে। আমিতো জানতাম এসব উৎপাত শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই হয়।
মিনিট পনেরোর মধ্যেই রাস্তার পাশের জটলা কাটিয়ে বের হয়ে আসতে পারল ওরা। গাড়ী সির দরিয়া রোডের চৌরাস্তা অতিক্রম করেছে অনেক আগেই, এখন পাখতাবাদের পাশের হাইওয়ে ধরে সুবহানাবাদের দিকে ছুটছে। জটলাটা সির দরিয়ার পরে পরেই ছিল। সুবহানাবাদে রাস্তা বেশ ফাঁকা। আবহাওয়ার অবস্থা বেশী ভাল মনে হচ্ছেনা। পুরো আকাশ ধূসর বর্ণ ধারণ করে আছে। সবচেয়ে বাজে ব্যপার হচ্ছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শীতের বৃষ্টি বাঙ্গালী রুচিতে খুবই বিশ্রী ব্যাপার। বাংলাদেশে যদিও কার্তিক মাসে একটু আধটু বৃষ্টি হয়; কিন্তু তখন শীতের তেমন প্রকোপ থাকেনা বিধায় মেনে নেয়া চলে। এখানে তের ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সাথে গুড়ি বৃষ্টি চোখে রীতিমত অসহ্য ঠেকছে। ইউরোপ হলেও মেনে নেয়া যেত। এই মধ্য এশিয় ওরিয়েন্টাল পরিবেশে এটা একদমই হজম হচ্ছেনা।
ওরা সমরখন্দের ভেতর প্রবেশ করেছে। বসন্তে সমরখন্দ অনেক সুন্দর জায়গা হলেও শীতে তেমন উজ্জল নয়। রূপকের জন্য হোটেল গ্র্যান্ড সমরখন্দে রুম বুক করা আছে। কিন্তু আগে যেতে হবে বৃদ্ধ সুলেইমান আদহামের বাসভবনে। সৌজন্য সাক্ষাত শেষে হয়তো হোটেলে ফেরা যাবে।
জারা এখন ফিরদৌসি স্ট্রিট ধরে পশ্চিমে এগুচ্ছে। পনজব স্কয়ারের উত্তরে একটা রেসিডেন্সিয়াল ব্লকে জারাদের বাসা। লাল টালির ছাদ বিশিষ্ট বেশ বড় একটা দোতলা ভবনের সামনে এসে গাড়ী থামালো সে। গাড়ী থেকে নামল ওরা ভবনের সামনের উঠানের মত অংশটুকুতে, উঠানটা পাকা করাও নয় আবার ঘাসের জমিও নয়। স্রেফ রুক্ষ মাটি।
সদর দরজার সামনে এসে কলিং বেল চাপতেই মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা দরজা খুলে দিলেন। ঐতিহ্যবাহী উজবেকী পোশাকের সাথে মাথায় বর্ণিল স্কার্ফ পরিধান করে আছেন তিনি। হাসি মুখে হাতের ইশারায় ভেতরে আসতে বললেন ওদের।
ভেতরে ঢুকেই পায়ের তলায় বেশ পুরু আর অসম্ভব সুন্দর কার্পেট দেখতে পেল রূপক। ওদেরকে সোফায় বসিয়ে ভদ্রমহিলা দোতলার সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলেন। জারার কাছে জানা গেল ইনি জারার ফুপু। স্বামী মারা যাবার পর থেকেই এখানে বাবার বাসায় আছেন। তাঁর কোন ছেলে মেয়ে আছে কীনা জিজ্ঞেস করতেই জারা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেল। রূপক আর কথা না বাড়ানোই সমীচিন মনে করে অপেক্ষা করছে। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পেয়ে তাকাতেই রূপক একজন লাল টকটকে চেহারার ভরাট স্বাস্থ্যের বৃদ্ধকে নামতে দেখল। আস্তে আস্তে কিন্তু বেশ দৃঢ় পায়ে এগিয়ে এলেন ভদ্রলোক। ওদের সামনে এসে রূপকের দিকে হাতের বিশাল তালুটা বাড়িয়ে দিয়ে গমগমে কণ্ঠে বললেন
-ওয়েলকাম ইয়ংম্যান। আমিই আপনার কাঙ্খিত সুলেইমান আদহাম। আপনি হচ্ছেন সম্ভবত মি. …..
-ইয়াসিন শাহরিয়ার। আমাকে রূপক বলে ডাকতে পারেন।
-ইয়েস। মি. রূপক, আপনার দেখা পেয়ে খুশি হলাম। আপনি বোধহয় এভাবে উল্টো পথে না এসে আগে হোটেলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সত্যি বলতে কি আপনার এত কাছাকাছি থেকেও আগে দেখা না করে হোটেলে যেতে দেয়া আমার কাছে উজবেকীয় ভদ্রতার বরখেলাফ মনে হয়েছে। তাই একটু কষ্ট দিলাম। এই বৃদ্ধের আচরণে কিছু মনে করেননি নিশ্চয়ই ?
(রূপক মনে মনে বলল, কিছু মনে করিনি মানে? বুড়া তোমার কারণে পুরো জার্নিটাই উল্টো হয়েছে। যেভাবে আমি ভেবে রেখেছিলাম তার কিছুই হয়নি। এখন বেশ হেসে হেসে কথা বলা হচ্ছে?) মুখে বলল
-না না মনে করব কেন। ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই। আপনার সাথে আগে দেখা হওয়া ও তো দরকার। আফটার অল পুরো প্রক্রিয়াটা আপনাকে দিয়েই তো শুরু হবে।
বৃদ্ধ সোফায় বসতে বসতে বললেন
-না, ঠিক তা নয়। শুরুটা এবং শেষটা হবে আসলে জারাকে দিয়ে। তবে মাঝে মাঝে আমাকে কাজে লাগাবেন; এই আর কি।
একটু বিরতি নিয়ে আবার বললেন
-তা আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
-না না তেমন কোন সমস্যা হয়নি। শুধু উজবেকিস্তান এয়ালাইন্সের এয়ার হোস্টেসরা একটু বেশী উগ্র মেকাপে ছিল বলে আকাশপথটা চোখ বুজেই আসতে হয়েছে। এছাড়া আর কিছু নয়।
রূপকের কথা শুনে বৃদ্ধের চোখ কবুতরের ডিমের সমান বড় হয়ে উঠল। বিস্মিত কণ্ঠে বললেন
-মানে? বলছেন কী?
-মানে আমাদের দেশে বাবার বাবা অর্থাৎ দাদার সাথে মজা করার ঐতিহ্য আছেতো তাই আপনার সাথে একটু মজা করলাম। আপনি তো আমার দাদার বয়েসীই হবেন তাই না?
এতক্ষণে রূপকের রসিকতাটা ধরতে পেরে বৃদ্ধ পুরো বসার ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন। একচোট হেসে নিয়ে বললেন
-এটা ভাল বলেছেন। এটা বেশ বলেছেন।
সুলেইমান আদহামের বাসায় রূপকের বৈকালিক নাস্তাটা বেশ ভালই হল। চিনি ছাড়া কফিটা অসাধারণ ছিল। সন্ধ্যার আগে আগে জারা রুপককে গ্র্যান্ড সমরখন্দের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল। চলে যাবার সময় ওর চোখের দিকে জারার চোখের দৃষ্টিটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশী সময় স্থির হয়ে ছিল মনে হল রূপকের।
আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় মি. আদহামের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে রূপকের। রূপক সাথে করে প্রচুর রেফারেন্স ডকুমেন্ট নিয়ে এসেছে। আর্টিকেল আর রিসার্চ পেপারের কপি। তাছাড়া ইন্টানেটের কল্যাণে আজকাল যখন তখন যে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে পাওয়া আরও সহজ হয়ে গেছে। ল্যাপটপে ট্রাই করে দেখেছে রূপক হোটেলের ওয়াইফাই সিগন্যাল বেশ জোড়ালো। খুব ভাল স্পিড পাওয়া যাচ্ছে। অথচ নিজের দেশে এটা চিন্তাই করা যায়না। আপনমনে ভাবছে – উজবেকরা ঠিকই সচেতন, অথচ আমরাই উজবুক হয়ে আছি এখনও।
গ্র্যান্ড সমরখন্দ উজবেকিস্তানের অন্যতম সুন্দর হোটেল। হতেই হবে। কারণ বিশ^খ্যাত তৈমুর লঙের সমাধিকে কেন্দ্র করে এখানে প্রতিনিয়ত প্রচুর বহিরাগত পর্যটক আসে। তাদের যথাযথ আবাসনের ব্যবস্থা ও পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে উজবেক কর্র্তৃপক্ষ সদা তৎপর। উজবেকিস্তানের পর্যটন খাতে বার্ষিক যে বত্রিশ মিলিয়ন ইউ এস ডলার আয় হয় তার একটা বড় অংশই আসে সমরখন্দ থেকে। তাই সমরকন্দের সামগ্রিক উন্নয়ন ও পর্যটন বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারী প্রচেষ্টা নিয়মিত বিষয়।
রাত এগারটা চল্লিশ।
হোটেল রুমের রিডিং টেবিলে বসে আছে রূপক। ঘরে অল্প ওয়াটের একটা ফ্লুরোসেন্ট বাতি জ¦লছে। প্রিন্টেড শীটগুলোয় চোখ বোলাচ্ছে ও। ডিনারের পর দশটার দিকে হোটেল রুম ছেড়ে একটু বাইরে বেরিয়েছিল। হোটেলের সামনের রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে খানিকটা হেঁটে আসাই ছিল উদ্দেশ্য। রাতে গুড়ি বৃষ্টি ছিলনা তাই হাঁটতে খারাপ লাগেনি। এতবড় পাঁচ তারকা হোটেল শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত অথচ হোটেলের আশপাশটা খুব একটা আলোকিত ছিলনা। সেজন্যে অবশ্য খারাপ লাগেনি হাঁটতে বরং ভালই লেগেছে। বেশী সময় বাইরে থাকেনি ও। সাড়ে দশটায়ই ফিরে এসেছে রুমে। মাথার ভেতর নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। (চলবে)