পর সমাচার এই যে —
জগতের সমস্ত ভাবনারা এইমাত্র মূহুর্তে জানান দিল — যাও তোমাকে ছেড়ে দিলাম।
আহ! বাঁচলাম! কিন্তু প্রশান্তির দমকা হাওয়া যেন কেউ ঠেকিয়ে রেখেছে! তাই ছুঁতে পারছে না আমাকে। আপন মনের উইন্ডমিলের সুইচটাও এই মুহূর্তে নাগাল পাচ্ছি না।
দক্ষিনের জানালার ধারে বসে চাঁদ দেখি। ছাদে যাবার সাহস নেই। মেয়েকে নিয়েও না। আমার কারণে বাচ্চাটাও ভয় পাক কিংবা আমার মতো অদ্ভুতুড়ে হোক চাই না। এই পৃথিবীতে আমার মতো যেন কেউ না হয়।
একটা গল্প লিখব বলে কখন থেকে কোঁকাচ্ছি। কারণ জ্বলে পুড়ে খাঁক হচ্ছে মেঘলা আকাশ। গল্পের নাম মনেমনে ঠিক করে রেখেছি ‘দহন’।
লেখক এর চেয়ে কবিদের এখন আমার অবাক প্রাণী মনে হয়! ওরা যেন কেমন! কোত্থেকে এসেছে ওরা! কিভাবে এমন সাজায়? আহারে অমন সাজাতে নিজেকে কতটা ফালা ফালা করতে হয় ওদের? অতঃপর ঠিকঠাক জুড়ে যায়! পুনরায় পূর্ণ হয়। যেন এ্যামিবা! নিখুঁত প্রেম, নারীর দেহবল্লরীর উত্তাপ, কস্তুরি নাভি দেশ, বক্ষদেশের হিল্লোল কিংবা চুমুতে সুঘ্রাণ মিশ্রিত লালা! কিছুক্ষেত্রে বিশেষ ঘ্রাণেও পৌঁছে যায় বাস্তবতা থেকে অক্ষরে!
তারপর ঝুপ করে উধাও হয়ে যায় কবির প্রেম! ঢেউ ভেঙে আছড়ে পড়ে হৃদয় বালুটতে। ওদের হৃদয় হয়তো বালুই হবে। ভাঙে। কাটে। পুনর্জাগরণ হয়৷ আহা! নম! নম! কবি! নম! নম! কাব্য!
কই আমি তো পারি না কাব্য করতে। পারিনা বলতে তার গাল গুলো কেমন গোলাপি হয়ে ওঠে মাটি রঙ ঝেড়ে। মদির ঠোঁটও গোলাপি! আমার চোখে সব গোলাপি হয়ে যায় কেন! আমাদের জিভের রঙ গোলাপি তাই?
এই মুহুর্তে সোনালি চাঁদ রূপালি দৃষ্টি মেলে আমায় দেখছে। চাঁদের মতো প্রেমের জ্বালায় কেউ জ্বালায়নি। সমস্ত বিছানা জুড়ে। তার প্রেমময় ভীষণ বিস্তারের কাছে মশারী আর জানালার পর্দা ছিল খুবই মামুলি। অন্ধকারে কিশোরী পায়ের রূপার নূপুর ঠিক ঝিকমিক করে ইশারা দিতো! রাগে দুঃখে বিছানার মাঝখানে বসে থাকতাম। মনে হতো রূপালি সাগরে ভাসি তাও মাঝ রাতে! ঘুম আসবে কোত্থেকে? যেমনি তাকে ছাড়বো বলে ঘর বদল করলাম সেই তখনই বুঝলাম আমার প্রেম হয়েছে। প্রেমের পরে বিরহ জ্ঞান লাভ হয়।
পুনরায় ঘর ফিরে পেলাম (মনে মনে)! বালিকা থেকে কিশোরী হচ্ছি। তখন আকাশের চাঁদ হারালাম। মাটির চাঁদ পেয়েছিলাম। কিন্তু চাঁদ আকাশে বা মাটিতে যেখানেই থাক নাগালের বহুদূর।
প্রকৃত অর্থে সবাই সবার থেকে বহুদূর। আমরা কেবল মহাশূন্য, মহাশূন্য উচ্চারণ করি। এই মহাশূন্য আবার সকলকে নিকটে করে। আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লিওপেট্রা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী,তীক্ষ্ণ বিচক্ষণ এই নারী তিন রাত আমার সাথে ছিলেন। এতো মোলায়েম তার মন ঠিক রেশমের মতন। এতিম রূপবতী যদি সম্পত্তি এবং রাজ্যের অধিকারী হয় তখন কাক চিল যেমন তাকে ঠুকরে দিতে চায় তেমনই আরশোলা তার পিছু ছাড়ে না।
আহ! ক্লিওপেট্রা আমি তোমাকে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না। তুমি কত সুন্দর ছিলে গো? অথচ কী এক পবিত্র প্রেম লুকোনো ছিল তোমার হৃদয়ে! নির্বোধ প্রেমিক এণ্টিনিও তা বোঝেনি।
ক্লিওপেট্রা তাই বারবার উচ্চারণ করেছে , ‘বেঁচে থাকা এতো কষ্টের কেন?’ হায়! চোখের পলকে দুনিয়া যার বশ তার কাছেও জীবন বিষময়! এতো এতো হৃদয় ছেনে, মেখে কী দেখলে শেষ অব্দি?
টাইমুনিয়াম, এট্রিয়াম, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর, পিরামিড খুব ঘুরলাম তোমার সাথে! দম বন্ধ করে তোমার সাথে ছিলাম। একসময় তোমার প্রিয় পরিচারিকা চারমিওন মনে হয়েছিল নিজেকে। তোমার সাথে সাথে যে নিজেকে শেষ করে দেয়।
আমি কাউকে নিয়ে কোন নেতিবাচক কথা বলতে চাই না। মন্দ বলতে চাই না। কারণ যখন যার পাশে বসে তার কথা শুনেছি মনে হয়েছে সে-ই ঠিক।
ক্লিওপেট্রা’র করুণ প্রস্থান যখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো তখন তখন মন সরাতে চাইলাম। একজন মায়ের ‘শেষ চিঠি’ পড়তে পড়তে দেখলাম তিনিও একই উচ্চারণ করেছেন, ‘বেঁচে থাকা এতো কঠিন কেন!’
এই যে হাজার হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকার যুদ্ধ চলছে, তুমি, আমি, সে, ও লড়ছি আমাদের জন্য আশীর্বাদ করি –
লড়ো শেষ নিশ্বাস অব্দি লড়াই করে যাও।