শোন একটা কথা।
বল।
তুমি কি ব্যস্ত?
বল সমস্যা নেই।
না, সমস্যা আছে। ব্যস্ত থাকলে বলব না।
সৌমিক ল্যাপটপে কাজ করছিল। সে এবার দীপ্তির মুখোমুখি হলো। বল এবার কী বলতে চাও।
কাল আমাকে একটা জ্বিনে ধরেছিল।
তাই! বেশ ত। তা ছেড়ে দিল কেনো?
মানে?
মানে আর কি! জ্বিনে ধরেছিল বুঝলাম কিন্তু ছেড়ে দিল কেন বুঝিনি। তাই জিজ্ঞাসিলাম।
তুমি আমার সাথে ইয়ার্কি করছ? যাও বলবো না।
আরে বল। অনেকদিন জ্বিন পরীর গল্প শুনিনা। অবশ্য কিছুদিন আগে পুরো মিডিয়া দখল করে রেখেছিল একটা পরী।
দীপ্তি উঠে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মুখ থমথমে। সৌমিক এবার দীপ্তির হাত ধরে বসাল। ঠিক আছে, আই এম সিরিয়াস। বলো শুনি।
গতকাল আমি হাঁটতে বের হয়েছিলাম। ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে বাসার দিকে যখন ফিরছিলাম তখন মনে হলো তেলাকচুর পাতা তুলে নেই কিছু। সেদিন ইউটিউবে দেখছিলাম এটার রস নাকি খুব উপকারী।
তারপর?
মন্দিরের ওই রাস্তাটায় অনেকগুলো গাছ। আমি পাতা তুলছি। ঠিক সেই সময়ে হঠাত একটা মহিলা দেখতে ঠিক আমারই মতন। মুখে স্কার্ফ বাঁধা। প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম আমি আমাকে দেখে। ঠিক যেন আমি। আমি যে রঙের কাপড় পরেছি ঠিক একই রকম কাপড় পরা।
ইন্টারেস্টিং! তারপর?
পাতা ছিঁড়তে দেখে আমাকে বলল মানে ওখানে যেহেতু আর কেউ ছিল না, তাই নিশ্চিত সে আমাকেই বলল যে পাতা ছিঁড়িস না। এই কথা শুনে হঠাৎ করেই আমার হাত পা সব অবশ হয়ে আসলো যেন। আমি কোনরকম তাড়াতাড়ি পা চালালাম। আর একবারও পেছনে তাকাইনি।
সৌমিক বলল গতকালের ঘটনা তুমি আমাকে বাসায় এসে বলনি কেন?
বুঝতে পারছিলাম না। ভয় পাচ্ছিলাম।
চলো আজ বিকেলে আমিও তোমার সাথে হাঁটতে যাবো।
তুমি যাবা?
হুম। আমি যতদূর জানি তোমার কোন বোন নেই। এখন তোমার যদি ডুপ্লিকেট থাকে খারাপ কী?
মানে?
মানে হলো তাকেও বাসায় নিয়ে আসলাম আর কি। সংসারে অনেক কাজ। একা একা তুমি পেরে উঠছ না যে।
তুমি কি ইয়ার্কি ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারো না? শয়তান লোক!
আচ্ছা শোন! সিরিয়াস কথা হলো ভদ্রমহিলা হয়তো ওই পাতার রস খায়। তাই তোমাকে পাতা ছিঁড়তে নিষেধ করেছে। নিজের ভাগেরটা কে ছাড়তে চায় বলো! আর স্কার্ফ থাকাতে, জামার কালার এক হওয়াতে তোমার তাঁকে নিজের প্রতিচ্ছবি মনে হয়েছে। এবার ঠিক আছে? আর তাছাড়া জ্বিনতো পুরুষ। মেয়ে মানেত পরী। যতদূর শুনেছি ছেলেদের ধরে পরী আর মেয়েদের বদ জ্বিন।
হইছে তোমার আর ব্যাখ্যা করা লাগবে না। শোনাও লাগবে না কিছু।
সৌমিক অফিসের সব কাজ সেরে সেদিন বিকেলে দীপ্তির সাথে হাঁটতে বের হলো। দু’জনে অনেকদিন পর একসাথে হাঁটতে বের হলো। সৌমিকের খুব ভালো লাগলো এই ভ্রমণটা। দীপ্তি সেদিন যেই রাস্তায় গিয়েছে সেই রাস্তাগুলোতেই হাঁটল। মন্দিরের ওই রাস্তাটাতে তেলাকচুর পাতা ছিঁড়ল। কেউ নিষেধ করতে আসলো না। শুধু সৌমিকের নাকে বকুল ফুলের একটা তীব্র গন্ধ ধাক্কা লাগল। সে ভাবলো হয়তো আশেপাশে কোন বকুল ফুলের গাছ আছে। থাকতেই পারে।
নতুন স্যান্ডেলের কারনে হাঁটতে হাঁটতে সৌমিকের পায়ের পাতায় ফোস্কা পড়ে গেল। সে আর হাঁটতে পারছে না। দীপ্তি বলল তুমি রিক্সা নিয়ে চলে যাও আমি বাকিটা পথ হেঁটে বাসায় চলে আসবো।
ডিনার সেরে সৌমিক আবার অফিসের কাজ নিয়ে একটু বসলো। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে করে এখন আর কাজের কোন টাইম টেবিল নেই। কাল জরুরি ওয়ার্কশপ। দীপ্তি সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে লাইট অফ করে শুয়েছিল। তাঁর নাকি মাথা ব্যাথা। সৌমিক আর বিরক্ত করেনি।
ঘুমুতে যাওয়ার আগে সৌমিক দেখল দীপ্তি অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে। শীতের আগমনী একটা বাতাস বয়ে যাচ্ছে বারান্দায়। দীপ্তির সিল্কি চুল্গুলো উড়ছে। সৌমিকের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। সে চুপিচুপি দীপ্তিকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরল। সৌমিক চমকে উঠল। বকুল ফুলের একটা তীব্র ঘ্রাণ তাঁর নাকে এলো।